বরিশাল রেল নেটওয়ার্কের আওতায় আসছে

লেখক:
প্রকাশ: ৬ years ago

ভারতের সঙ্গে মোট ৯টি রেল ইন্টারচেঞ্জ রুট চালু করা হবে বলে জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। সোমবার (০৪ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় সংসদে রেলমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশ থেকে ভারতের সঙ্গে রেলওয়ে সংযোগের জন্য ৭টি ইন্টারচেঞ্জ পয়েন্ট আছে। এ ৭টি ইন্টারচেঞ্জ পয়েন্টের মধ্যে বর্তমানে ৪টি চালু রয়েছে। বাকি ৩টি ইন্টারচেঞ্জ চালু করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া আরো দুটি নতুন ইন্টারচেঞ্জ পয়েন্ট চালু করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

সোমবার জাতীয় সংসদে ভোলা-২ আসনের সংসদ সদস্য আলী আজমের এক লিখিত প্রশ্নের জবাবে তিনি এ তথ্য জানান।

এসব রেল সংযোগের মধ্যে রয়েছে- দর্শনা-ভারতের গেদে, বেনাপোল-পেট্রাপোল, রোহনপুর-সিঙ্গাবাদ, বিরল-রাধিকাপুর, শাহবাজপুর-মহিশাসন, চিলঅহাটি-হলদিবাড়ি, বুড়িমারী-চেংড়াবান্ধা, আখাউড়া-আগরতলা এবং ফেনী থেকে ভারতের বিলোনিয়া পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ।

ঢাকা শহরের চতুর্দিকে বৃত্তাকার রেলপথ নির্মাণ

সংসদে নুরুন্নবী চৌধুরীর ( ভোলা-৩) অপর এক প্রশ্নের জবাবে রেলমন্ত্রী জানান, যানজট নিরসনে ঢাকা শহরের চারিদিকে বৃত্তাকার রেলপথ নির্মাণের জন্য একটি সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রস্তাব গত ২০১৭ সালের ২৭ ডিসেম্বর পরিকল্পণা কমিশনে অনুমোদিত হয়। এর পরামর্শক নিয়োগের জন্য ২ বার ইওআই আহ্বান করা হয়েছে এবং নেগোসিয়েশন চলমান।

এ প্রকল্পের অগ্রগতি ১৯ শতাংশ বলে জানান রেলমন্ত্রী। তিনি বলেন, সমীক্ষা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করা হবে।

প্রশ্নকর্তার অপর এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে রেলমন্ত্রী বলেন, ঢাকা থেকে সিলেট এবং ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত দ্রুতগতির রেল রুট চালুর ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশক্রমে রেলওয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ইতিমধ্যে এ রুটের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ চলছে। আশা করি সম্ভাবতা যাচাই শেষ হলে আমরা ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে দ্রুতগতির রেল লাইন বসানোর কাজ করতে সমর্থ হবো এবং চালু করতে পারবো।

২০০৯ থেকে এ পর্যন্ত ১ লাখ ৮ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬৪ টি প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অর্থাৎ ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত রেলের উন্নয়নে মোট ১ লাখ ৮ হাজার ৬১৬ কোটি ৩৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ৬৪ টি প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। এছাড়া ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এডিপিতে বাংলাদেশ রেলওয়েতে ৪৫টি বিনিয়োগ প্রকল্প এবং ৩টি কারিগরি সহায়তা প্রকল্প অর্থাৎ মোট ৪৮টি উন্নয়ন প্রকল্প অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে।

এজন্য মোট ১১ হাজার ৩৩১ কোটি ৪৮ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন।

সুজন বলেন, বর্তমানে দেশে ৪৪টি জেলা রেল নেটওয়ার্কের আওতায় রয়েছে। আরো ১৫টি জেলা (মুন্সিগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, মেহেরপুর, মাগুরা, সাতক্ষীরা, বরিশাল, বান্দরবান, কক্সবাজার, নড়াইল, ঝালকাঠি, পটুয়াখালি, মানিকগঞ্জ, পিরোজপুর এবং বরগুনা) রেল নেটওয়ার্কের আওতায় আনতে কাজ করা হচ্ছে। পরবর্তীতে দেশের ৬৪টি জেলাকেই রেল নেটওয়ার্কের আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান রেলমন্ত্রী।

নুরুল ইসলাম সুজন বলেন- রেলপথ পুনর্বাসন ও নতুন রেল লাইন নির্মাণের জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ে পদক্ষেপ নিয়েছে। ইতিমধ্যে ২০০৯ সাল থেকে অদ্যাবধি ৩৩০.১৫ কি.মি. নতুন রেললাইন নির্মাণ এবং ১১৩৫.২৩ কি মি. রেলপথ পুনর্বাসন করা হয়েছে।

এছাড়া ভারতীয় লাইন অব ক্রেডিটের আওতায় খুলনা থেকে মংলা পর্যন্ত ৬৪.৭৫ কিমি রেলপথ, ঈশ্বরদী থেকে ঢালারচর পর্যন্ত ৭৮.৮০ কিমি রেলপথ নির্মাণ কাজ চলছে।

প্রায় ১৩টি নতুন রুটে রেল চালানোর জন্য ভিজিবিলিটি টেস্ট করার জন্য পরামর্শক নিয়োগ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

বন্ধ থাকা রেল লাইন চালুর প্রসঙ্গে রেলমন্ত্রী জানান, কালখালি-ভাটিয়াপাড়া, বিরল-রাধিকাপুর, কুলাউড়া-শাহবাজপুরসহ দেশের আরো কয়েকটি বন্ধ হওয়া রেলপথ চালু করার কাজ চলছে।

পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প

একই প্রশ্ন কর্তার অপর এক প্রশ্নের জবাবে রেলমন্ত্রী সুজন জানান, পদ্মা সেতু রেলপথ নির্মাণ আগেই একনেকে অনুমোদিত হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য ২০১৬ সালের ৮ আগস্ট চীনের সরকারী কোম্পানি চায়না রেলওয়ে গ্রুপের সঙ্গে নির্মাণ কাজের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। ইতিমধ্যে এ প্রকল্পের কাজ তদারকির জন্য পরামর্শক নিয়োগ করা হয়েছে।

চায়না এক্সিম ব্যাংক এ প্রকল্পের অর্থায়ন করছে। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি ১৬.৭০ শতাংশ। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকা থেকে মাওয়া পর্যন্ত কমিউটার ট্রেন সার্ভিস চালান সম্ভব হবে বলে জানান মন্ত্রী।

তিনি জানান, পদ্মা সেতু রেল সংযোগের আওতায় ১০০ টি বিজি কোচ সংগ্রহ প্রক্রিয়াধীন। এ ছাড়া দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থায়নে ২০টি, এডিবির অর্থায়নে ১০টি এবং সাপ্লায়ার্স ক্রেডিটের আওতায় ৭০টি এমজি লোকেমোটিভ সংগ্রহ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এছাড়া ইডিএফসি, দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থায়নে ১৫০ টি এমজি, টেন্ডার্স ফিন্যান্সিং এর আওতায় ২০০টি এমজি এবং এডিবির অর্থায়নে ২০০টি এমজি ও ৫০ টি বিজি কোচ, এডিবির অর্থায়নে ৪০টি ব্রডগেজ লোকমোটিভ, ৭৫ টি মিটারগেজ ও ৫০ টি ব্রডগেজ ল্যাগেজ ভ্যান এবং ৫৮০টি মিটারগেজ ও ৪২টি ব্রডগেজ ওয়াগান সংগ্রহ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এগুলো এলে রেলের সক্ষমতা বাড়বে বলে জানান রেলমন্ত্রী।’