বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় ২১টি সংসদীয় আসনে যাছাই-বাছাই শেষে ২৮ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের অভাব এবং নানা ত্রুটির কারণে তাদের প্রার্থিতা বাতিল করা হয়।
জাতীয় পার্টির (জাপা) কো-চেয়ারম্যান এবিএম রূহুল আমিন হাওলাদারসহ অনেক প্রার্থীর মনোনয়ন স্থগিত করা হয়েছে। উপযুক্ত কাগজপত্র দাখিল সাপেক্ষে আগামীকাল সোমবার তাদের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেওয়ার কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট রিটানিং কর্মকর্তা।
বরিশাল জেলায় ছয়টি আসনে ৬ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম।
বাতিলকৃত ৬ প্রার্থীরা হলেন- বরিশাল-১ (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া) আসনে জাকের পার্টির মোহাম্মদ রিয়াজ মোরশেদ জামান, বরিশাল-২ (বানারীপাড়া-উজিরপুর) আসনে বাংলাদেশ কংগ্রেস দলের মোহাম্মদ মিরাজ হোসেন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আলবার্ট বাড়ৈ, বরিশাল-৬ (বাকেরগঞ্জ) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী জাকির খান সাগর, মোহাম্মদ শাহরিয়ার মিয়া, নূরে আলম শিকদার। এ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী শামসুল আলম চুন্নুর ঋণখেলাপির অভিযোগে প্রার্থিতা স্থগিত করা হয়।
১৫ লাখ ৪ হাজার ৪৬ টাকা ভ্যাট বকেয়া থাকায় বরিশাল-৩ আসনে জাপার প্রার্থী বর্তমান এমপি গোলাম কিবরিয়ার টিপুর মনোনয়নপত্রে আপত্তি দিয়েছিল ভ্যাট অফিস। পরে পরিশোধ করে কাগজ জমা দিলে তার মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়।
বরিশাল-৫ (মহানগর-সদর) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর মনোনয়ন বৈধ ঘোষণার পর স্ত্রীর নামে আমেরিকায় বাড়ি করার অভিযোগ তোলা হয়। বিষয়টি হলফনামায় উল্লেখ আছে কিনা তা যাচাইয়ে একটি অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
বরিশাল-৪ (মেহেন্দিগঞ্জ-হিজলা) আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী ড. শাম্মী আহমেদের অস্ট্রেলিয়ায় নাগরিকত্ব ও স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান এমপি পঙ্কজ নাথের শেয়ারে পরিবহন ব্যবসার তথ্য গোপনের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ থাকায় সোমবার শুনানি শেষে সিদ্ধান্ত দেওয়ার কথা জানিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।
ভোলা জেলায় প্রার্থীতা বাতিল হয়েছে দুই প্রার্থীর। তারা হলেন- ভোলা-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. মিজানুর রহমান, ভোলা-২ আসনে বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রার্থী অ্যাডভোকেট মো. জাহাঙ্গীর আলম। এছাড়া ভোলা-২ আসনে জাপা প্রার্থী মিজানুর রহমানের ঋণখেলাপির অভিযোগ উঠায় তার মনোনয়ন স্থগিত রেখে সোমবার সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানানো হয়েছে।
ঝালকাঠী জেলায় ৭ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। তারমধ্যে ৬ জনই ঝালকাঠী-১ আসনের। তারা হলেন- আওয়ামী লীগ দলীয় বর্তমান এমপি বজলুল হক হারুন, স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা এম মনিরুজ্জামান মনির, কৃষি ব্যাংকের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন, জাপার মো. এজাজুল হক, স্বতন্ত্র নুরুল আলম ও ব্যারিস্টার আবুল কাশেম ফখরুল।
প্রসঙ্গত, ঝালকাঠী-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ব্যরিষ্টার শাহজাহান ওমর। মনোনয়ন ফরম জমা দেওয়ার শেষদিন তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে দেশজুড়ে আলোচিত হন। ঝালকাঠি-২ (সদর-নলছিটি) আসনে জাপার মো. নাসির উদ্দিনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে।
পিরোজপুর জেলায় মনোনয়ন ফরম বাতিল হয়েছে ৫ জনের। তারা হলেন- পিরোজপুর-১ (সদর-ইন্দুরকানি-নাজিরপুর) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. আলাউদ্দিন খান এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল আহসান গাজী, তৃণমূল বিএনপির মো. ইয়ার হোসেন রিপন, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মো. শাহ আলম এবং পিরোজপুর-২ (ভাণ্ডারিয়া-স্বরূপকাঠী-কাউখালী) আসনে জাপার মো. খলিলুর রহমান।
বরগুনা জেলায় ৪ জনের প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। তারা হলেন- বরগুনা-১ (সদর-আমতলী-তালতলী) আসনের দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী খলিলুর রহমান ও নুরুল ইসলাম। বরগুনা-২ (পাথরঘাটা-বামনা-বেতাগী) আসনে স্বতন্ত্র রফিকুল ইসলাম ও কংগ্রেস পার্টির আব্দুর রাজ্জাক। একই আসনে জাপা প্রার্থী মিজানু রহমানের ঋণ খেলাপির অভিযোগ উঠায় তার মনোনয়ন স্থগিত রাখা হয়েছে।
৮৮ লাখ টাকা কর না দেওয়ায় এবং তিন কোটি ৬৮ লাখ ৯২ হাজার টাকার রাজস্ব আইনের মামলা আপিল ট্রাইবুনালে বিচারাধীন থাকায় পটুয়াখাীলী-১ (সদর-দুমকী-মীর্জাগঞ্জ) আসনে জাপার কো-চেয়ারম্যান এবিএম রূহুল আমিন হাওলাদারের মনোনয়নপত্র স্থগিত করেছেন পটুয়াখালীর রিটানিং কর্মকর্তা জেলা প্রশাসক মো. নুর কুতু আলম।
এছাড়া পটুয়াখালী-১ আসনে বাংলাদেশ কংগ্রেসের নাসির উদ্দিন ও জাকের পার্টির মিজানুর রহমান, পটুয়াখালী-২ (বাউফল) আসনে স্বতন্ত্র নুর মোহম্মদ ও পটুয়াখালী-৪ আসনে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) হাবিবুর রহমানের মনোনয়ন ফরম বাতিল করা হয়েছে।