 
                                            
                                                                                            
                                        
শামীম আহমেদ॥ মাত্র ১৩ বছরের গৃহকর্মীকে ঘরে আটকে গরম খুন্তি দিয়ে শরীরের বিভিন্ন অংশে ছ্যাঁকা দিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। খবর পেয়ে বরিশাল নগরের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে আশা নামের ওই গৃহকর্মীকে উদ্ধার করে।
এ ঘটনায় বুধবার (১২ আগস্ট) পুলিশের এসআই আলামিন বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছে বলে জানিয়েছেন কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল ইসলাম। তবে এ ঘটনায় এখনো কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি।
জানা গেছে, বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের ১৬ নং ওয়ার্ডের রিফুজি কলোনী এলাকার বাসিন্দা বুলবুল বিশ্বাস ও বকুল বিশ্বাস কয়েক বছর পূর্বে ব্যাপ্টিস্ট মিশন রোডের বাসিন্দা ডেভিড বিশ্বাস ও মেরী বিশ্বাসের দুই সন্তানের মধ্যে বড় মেয়ে আশা বিশ্বাসকে গৃহকর্মী হিসেবে নিয়ে আসেন। আশাকে নিয়ে আসার কিছুদিন যেতেই ওই গৃহকর্মীর ওপর নানানভাবে নির্যাতন চালানো হতো।
ঠিক কত বছর আগে বুলবুল ও বকুল পিসিদের বাসায় কাজে এসেছেন তা না জানলেও গৃহকর্মী আশা জানায়, কথায় কথায় ওই বাসায় তাকে মারধর করতো বকুল আর বুলবুল পিসি। আবার কখনো খুন্তি গরম করেও শরীরে ছ্যাঁকা দিতো। চিৎকার করেও লাভ হতো না, গলা চেপে ধরে মারতেন।
তিনি জানান, পিসিরা আঘাতের স্থান দেখে দেখে পুনঃরায় মারধর করতেন। অনেক স্থানে ঘাঁ হয়ে গেছে সেখান থেকে পুঁজ বের হত। আর যন্ত্রনার কথা বললেও নির্যাতনের ধরণ পাল্টে যেতো। আর নির্যাতন চালিয়ে ঘরের মধ্যেই আটকে রাখা হতো, যদি কোন কারণ বসত ঘরের বাইরে গেলেও মারধর করা হতো। আশা জানায়, পিসিরা বলাবলি করতেন আমি বাইরে বের হলেই নাকি লোকজনের কাছে নালিশ করি। আবার আমাকে মারধরের কথা বলি। থানা পুলিশের নারী সদস্যরা জানিয়েছে, নির্যাতনের আঘাতে আশার ঘাড়ে, হাতে, পায়ে, পিঠে ক্ষত ও জখমের চিহ্ণ রয়েছে।
আশা বিশ্বাসের পিতা ডেভিড বিশ্বাস জানান, ইচ্ছা থাকলেও মেয়েকে তাদের (বকুল ও বুলবুল বিশ্বাস) কাছ থেকে নিতে পারি না। মারধরের কথা শুনে আমি একবার নিয়ে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তাদের স্বজন সায়মন কুন্তল বিশ্বাস আমাকে হুমকি দেয়, আমার সাথে ‘খারাপ কিছু’ করে ফেলবেন। তারপর মেয়ের আশা ছেড়ে দিয়েছি। কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি নুরল ইসলাম জানিয়েছেন, শিশুটিকে নির্যাতনের ভয়াবহ তথ্য উঠে আসছে। তার ওপর অমানসিক নির্যাতন হতো প্রতিনিয়ত। আমরা এ ঘটনায় নির্যাতনকারী দুইজনের বিরুদ্ধে মামলা গ্রহন করেছি।
উল্লেখ্য বুধবার (১১ আগস্ট) আশা এক প্রতিবেশীর কাছে তার জীবন বাঁচানোর অনুনয় জানান। এসময়ে তার শরীরের বিভিন্ন আঘাতের চিহ্ন দেখে ওই প্রতিবেশী কোতয়ালি মডেল থানায় জানালে, রাতে ওসি নুরুল ইসলাম শিশুটিকে উদ্ধার করেন। পুলিশের খবর পেয়ে পালিয়ে যান নির্যাতনকারী বকুল বিশ্বাস ও বুলবুল বিশ্বাস। এদিকে এ ঘটনার পর নির্যাতনকারী ওই পরিবারের পক্ষে জনৈক লোক নিজেকে ক্ষমতাশালী জাহির করে পুলিশের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন এবং শিশু নির্যাতনের ঘটনায় যেন কোন পদক্ষেপ গ্রহন না করি সেজন্য চাপ সৃষ্টি করেন বলে থানা পুলিশের একাধিক সূত্র জানিয়েছে।