 
                                            
                                                                                            
                                        
ইয়াবার প্রবেশ ঠেকাতে মিয়ানমার সীমান্তে কড়া প্রহরা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর অবস্থানের কারণে এবার সমুদ্র পথে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসছে ইয়াবা। আর বরিশালের উপকূলীয় জেলাগুলো দিয়ে সেই সব ইয়াবা ছড়িয়ে পড়ছে সারাদেশে। সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এমন তথ্য।
দেশে ইয়াবা পাচার ঠেকাতে কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্ত এলাকা থেকে শুরু করে রাজধানী ঢাকা পর্যন্ত স্থলপথে থাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া চোখ। তাই স্থলপথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে সমুদ্র পথে মিয়ানমার ও কক্সবাজার থেকে আসা ইয়াবা নৌ-পথে যাচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সর্বনাশা মাদক ইয়াবার বিরুদ্ধে গত বছরের মে মাস থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানের কারণে ইয়াবা পাচারের রুট পরিবর্তন করছে মাদক সিন্ডিকেটগুলো। গত বছর মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক অভিযানের মুখে কক্সবাজারের টেকনাফ ভিত্তিক মাদক পাচারকারী সিন্ডিকেটগুলো খানিকটা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। বন্দুকযুদ্ধে নিহতও হয় বেশ কিছু তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ী।
এ কারণে গ্রেফতার ও মৃত্যুর ভয়ে ইয়াবা পাচারের নতুন রুট হিসেবে সমুদ্র ও নৌ-পথ ব্যবহার করছে মাদক ব্যবসায়ীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছরের ৭ অক্টোবর কুয়াকাটা থেকে ঢাকা যাওয়ার পথে পটুয়াখালীর শেখ কামাল সেতুতে একটি গাড়ি তল্লাসি করে সাত লাখ ৫৬ হাজার পিস ইয়াবাসহ দুজনকে গ্রেফতার করে র্যাব-৮। এরপর গত দুই এপ্রিল সকালে বরগুনা থেকে ঢাকাগামী একটি যাত্রীবাহী লঞ্চ ও আবদুল্লাহপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে আট লাখ পিস ইয়াবাসহ তিনজনকে আটক করে র্যাব-১। সর্বশেষে গত ১০ এপ্রিল বঙ্গোপসাগরের রামনাবাদ চ্যানেলে অভিযান চালিয়ে পাঁচ লাখ পিস ইয়াবাসহ দুটি ট্রলার জব্দ করে কোস্টগার্ড। এসময় গ্রেফতার করা হয় দুজনকে।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মিয়ানমারের ইয়াবা ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশ-মিয়ানমার সমুদ্রসীমায় নিয়ে আসে ইয়াবা। সেখান থেকে বাংলাদেশি ইয়াবা ব্যবসায়ীরা গ্রহণ করে। এভাবেই গভীর সমুদ্রে হাত বদল হয় ইয়াবা। আবার কখনও কখনও জেলে সেজে ট্রলার নিয়ে সমুদ্রে যাচ্ছে ইয়াবা কারবারীরা। একই পদ্ধতিতে তাদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে ইয়াবা।
এরপর সেইসব ইয়াবা ট্রলারের মাধ্যমে পটুয়াখালী-বরগুনা-ভোলাসহ উপকূলীয় এলাকায় নিয়ে আসে মাদক ব্যবসায়ীরা। গভীর সমুদ্র থেকে উপকূলে ইয়াবা পৌঁছানোর জন্য অধিকাংশ সময় ব্যবহৃত হয় সমুদ্রগামী মাছ ধরার ট্রলারগুলো। এসব ট্রলারে ইয়াবা তীরে পৌঁছানোর পর ব্যবসায়ীরা সুযোগ বুঝে সুবিধামতো নদীপথ এবং স্থলপথ ব্যবহার করে এসব ছড়িয়ে দেয় সারাদেশে।
এ বিষয়ে র্যাব-৮ এর লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া অফিসার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তাজুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, মিয়ানমার থেকে সমুদ্র পথে উপকূলীয় জেলাগুলোতে ইয়াবার চালান আসার বিষয়টি আমাদের কাছে পরিষ্কার। তাই আমরা সতর্ক রয়েছি। আমাদের সোর্স বৃদ্ধি করা হয়েছে। পাশাপাশি গোয়েন্দা কার্যক্রম আরও ব্যাপক পরিসরে পরিচালনা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে কোস্টগার্ড দক্ষিণ জোনের স্টাফ অফিসার (অপারেশন) লেফটেন্যান্ট মাহবুবুল আলম শাকিল জাগো নিউজকে বলেন, বিস্তৃর্ণ সমুদ্রের পুরো স্থানই নৌ-যান চলাচলের উপযুক্ত। এ কারণে সড়ক বা নৌ-পথের মতো সমুদ্রে মাদক পরিবহন করা নৌযান সনাক্ত করে অভিযান পরিচালনা করা মোটেই সহজ নয়। তারপরও আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। অতিসম্প্রতি আমরা ইয়াবার বিরুদ্ধে একটি সফল অভিযান পরিচালনা করেছি। আমাদের এ সফলতার ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আমি আশাবাদি।
এ বিষয়ে বরিশাল রেঞ্চ পুলিশের ডিআইজি মো. শফিকুল ইসলাম বিপিএম (বার) পিপিএম জাগো নিউজকে বলেন, সমুদ্র হয়ে উপকূলীয় জেলাগুলোতে মাদকের প্রবেশ প্রতিহত করতে আমরা বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি।
এর মধ্যে সমুদ্রগামী প্রতিটি ট্রলারের তথ্য সংগ্রহ করছি। ট্রলারগুলো সমুদ্রে কবে যাচ্ছে, সমুদ্র থেকে কবে ফিরছে এবং ট্রলারে কারা কারা যাচ্ছে, সেই সব বিষয়ে পুলিশ তথ্য নিচ্ছে। পাশাপাশি উপকূলীয় জেলাগুলোর উপকূলে পুলিশের নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে।
এছাড়াও নৌ-পুলিশের কার্যক্রম চাঙ্গা করা হয়েছে। চট্টগ্রামের মতো উপকূলীয় জেলাগুলোতেও মাদক প্রবেশ প্রতিহত করতে আরও কয়েকটি পরিকল্পনার কথা প্রকাশ না করার শর্তে এই প্রতিবেদককে জানান ডিআইজি শফিকুল ইসলাম।