বরিশালে ডিবিসি টেলিভিশনের ক্যামেরাপার্সন সুমন হাসানকে নির্যাতনের ঘটনায় মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের তিন সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
বরখাস্তরা হলেন- মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের কনস্টেবল মাসুদুল হক, রাসেল পারভেজ ও আব্দুর রহিম । এছাড়া অভিযুক্ত মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের আট সদস্যের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলারও প্রস্তুতি চলছে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের সহকারী কমিশনার (এসি) নাসির উদ্দিন মল্লিক বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ডিবিসি টেলিভিশনের ক্যামেরাপার্সন সুমন হাসানকে নির্যাতনের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি বৃহস্পতিবার পুলিশ কমিশনার কার্যালয় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। প্রতিবেদনে পুলিশের আট সদস্যের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়। এর প্রেক্ষিতে এরই মধ্যে গুরুতর অভিযোগ থাকায় তিন পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়া অভিযুক্ত আট সদস্যের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলারও প্রস্তুতি চলছে।
অভিযুক্তরা হলেন- মহানগর (ডিবি) পুলিশের এসআই আবুল বাশার, এএসআই স্বপন ও আক্তার এবং কনস্টেবল মাসুদুল হক, রাসেল, হাসান, রহিম ও সাইফুল।
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ডিবিসির নির্যাতিত ক্যামেরাপার্সন সুমন হাসান জানান, মঙ্গলবার দুপুর ২টার দিকে অফিস থেকে বাসায় যাওয়ার পথে এক নিকট আত্মীয়কে গোয়েন্দা পুলিশে আটক করেছে খবর পেয়ে তিনি নগরীর বিউটি রোডের ঘটনাস্থলে যান এবং পুলিশের কাছে পুরো বিষয়টি জানতে চান। এ সময় যাদের আটক করা হয়েছে তাদের সঙ্গে তার বাকবিতণ্ডা হয়।
এর এক পর্যায়ে গোয়েন্দা পুলিশ তার পরিচয় জানতে চায়। সাংবাদিক পরিচয় পেয়েই তার উপর চড়াও হয় গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা। এ সময় প্রকাশ্যে তার পরনে থাকা টি শার্ট টেনে হিঁচড়ে পেটাতে পেটাতে তাকে গোয়েন্দা পুলিশের গাড়িতে তোলা হয়। পথিমধ্যে তার অণ্ডকোষ চেপে ধরাসহ তাকে অমানুষিক নির্যাতন করা হয় বলে অভিযোগ সাংবাদিক সুমনের।
খবর পেয়ে তার সহকর্মীরা নগরীর পলিটেকনিক রোডে নগর গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে যান। সেখানে নির্যাতিত সাংবাদিক সুমনকে হাতকড়া পরিহিত অবস্থায় কাঁদতে দেখে ক্ষোভে ফেটে পড়েন অন্যান্য সাংবাদিকরা। এ সময় সাংবাদিক সুমনকে নির্যাতনকারী প্রধান অভিযুক্ত কনস্টেবল মাসুদুল হক একজন সাংবাদিককে লাথি দেন। এতে সাংবাদিকরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। সাংবাদিকরা প্রতিবাদ মুখর হলে মেট্রোপলিটন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ওই দলে থাকা গোয়েন্দা পুলিশের আট সদস্যকে তাৎক্ষণিক পুলিশ লাইনে প্রত্যাহার করা হয়। ঘটনা তদন্তে গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার রুনা লায়লার নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি কমিটি করা হয়।
তদন্ত কমিটির সদস্য মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের সহকারী কমিশনার (এসি) নাসির উদ্দিন মল্লিক জানান, ডিবিসি টেলিভিশনের ক্যামেরারপার্সন সুমন হাসান, অভিযুক্ত আট পুলিশ সদস্য, প্রতক্ষদর্শীসহ ২০ জনের সাক্ষ্য নেয়া হয়। তদন্তে ৮ পুলিশ সদস্যের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনে আট পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করার সুপারিশ করা হয়। এর প্রেক্ষিতে তিন পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।