সম্পত্তির লোভ ও সার্বিকভাবে সুখে থাকার আশায় স্ত্রীর পরিকল্পনায় জবাই করে হত্যা করা হয়েছে চরমোনাই ইউনিয়নের বুখাইনগর এলাকার বাসিন্দা ও দলিল লেখক রেজাউল করিম রিয়াজকে (৪০)।
রোববার (২১ এপ্রিল) দুপুরে বরিশাল মেট্রোপলটিন পুলিশের গোয়েন্দা (ডিবি) শাখার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এমনটাই জানিয়েছেন উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিন) মোয়াজ্জেম হোসেন ভূঁঞা।
তিনি জানান, এরইমধ্যে স্বামীকে হত্যার দ্বায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন স্ত্রী আমিনা আক্তার লিজা (৩০)। আর ঘটনার পর সার্বিক দিক পর্যক্ষেন ও স্ত্রীর দ্বায় স্বীকারের মধ্য দিয়ে আমরা নিশ্চিত হয়েছি যে দলিল লেখক রেজাউল করিম রিয়াজকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। যেখানে রিয়াজের স্ত্রী লিজা ছাড়াও আরো ২ জন ব্যক্তি জড়িত রয়েছে। যারমধ্যে একজন মাসুম ও অন্যজনের নাম হাইল্যা বলে শোনা যাচ্ছে। মাসুম নিহত রেজাউল করিম রিয়াজের সহকারী ও আমিনা আক্তার লিজার পরকিয়া প্রেমিক।
তিনি জানান, ঘটনার পর নানান দিক বিবেচনা করে লিজা ও নিহতের ভাইকে আমরা হেফাজতে নেই। পরে লিজার দেয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করে নিহতের ভাইকে ছেড়ে দেয়া হয়।
অপরদিক হত্যাকান্ডের ঘটনায় জড়িত মাসুমসহ অপর ২ জনকে গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। উপ-পুলিশ কমিশনার মোয়াজ্জেম হোসেন ভূঁঞা ঘটনার বিবরনে জানান, বন্দর থানাধীন চরকাউয়া এলাকার দেলোয়ার খানের মেয়ে আমিনা আক্তার লিজার সাথে চরমোনাই ইউনিয়নের রাজধর গ্রামের ছত্তার হাওলাদারের ছেলে রেজাউল করিমের সাথে ৪ বছর পূর্বে বিবাহ হয়। যদিও এরআগে লিজার আরো ২ টি বিবাহ এবং নিহত রিয়াজের ১ টি বিবাহ ছিলো। তারা পূর্বের বিবাহের বিচ্ছেদের পরই ৪ বছর পূর্বে নতুন করে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তিনি জানান, লিজার পূর্বের স্বামী ৬৫ বছরের এক বৃদ্ধ ছিলো। নগরের পলাশপুরে থাকা তার জমি ও বাড়ি আমিনা আক্তার লিজা কৌশলে লিখে নেয় এবং এরপরই তাকে তালাক দেয়। এদিকে রেজাউল করিম পূর্বের স্ত্রীর সাথে ১০ বছর সংসার করে তালাক দেয়। লিজা নতুন বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে স্বামী রিয়াজকে নিয়ে শশুরবাড়িতে না থেকে রাজধর গ্রামের শাহজাহান ভূইয়ার বাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করতো। লিজার বরাত দিয়ে উপ-পুলিশ কমিশনার জানান, যেহেতু রেজাউলের পূর্বের ১০ বছরের সাংসারিক জীবনে কোন সন্তান হয়নি এবং লিজার সংসারেও কোন সন্তান হয়নি তাই এ নিয়ে পারিবারিক কলহ ছিলো।
এছাড়া পলাশপুরে থাকা ১৬.৫০ শতাংশ জমি লিজা তার নিজের নামে করে দিতে বললেও তাতে রাজি ছিলো না স্বামী রেজাউল। এদিকে ঘটনাচক্রে রিয়াজের সহকারি পলাতম অপর আসামী মাসুমের সাথে পরকিয়া প্রেমে জড়িয়ে পরে লিজা। মাসুম আশ্বস্ত করে যে, সে রেজাউলের থেকে লিজাকে বেশি সুখে শান্তিতে রাখবে। তাই লিজা সর্বোদিক থেকে সুখে থাকার আশায় নতুন প্রেমিককে পাওয়া এবং পলাশপুরের জমি আত্মসাৎ করার আশায় স্বামীকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী লিজা পরকিয়া প্রেমিক মাসুমের সহায়তায় দুধের সাথে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে রেজাউলকে খাইয়ে দেয় এবং ঘটনার দিন রাতে আগে থেকেই ঘরের ভেতরের মাচায় পরকিয়া প্রেমিক ও তার সহযোগিকে লুকিয়ে রাখার ব্যবস্থা করে লিজা।
এরপর লিজার স্বামী ঘুমিয়ে পড়লে শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) ভোররাতে তারা তিনজনে মিলে এক অপরের যোগসাজেশে রেজাউলকে খুড় ও দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাভিত করার জন্য ঘরের ভেতরে খাটের নিচে একটি সিদ কাটে। পরে পরকিয়া প্রেমিক ও তার সহযোগী ঘটনাস্থল ত্যাগ করলে লিজা তার পোশাক পাল্টে ফেলে এবং ঘরের বাহিরে এসে চিৎকার শুরু করে।
তিনি জানান, এর ধারাবাহিকতায় ৯৯৯ ফোন করে বিষয়টি পুলিশকে অবহিত করা হয়। ঘটনাস্থলে গিয়ে কাটা সিঁদ থেকে পুলিশের সন্দেহ হয়, কারন তা দিয়ে কেউ প্রবেশ করার কোন আলামত ছিলো না। আর ঘুমের ওষুধ খাওয়ানোর বিষয়টিও সামনে আসলে রিয়াজ আর তার স্ত্রী ছাড়া ওই ঘরে কেউ না থাকায় লিজাকে আটক করা হয়। লিজাকে জিজ্ঞাসাবাদ হত্যার কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন আলামত উদ্ধারের মধ্য দিয়ে ঘটনার মূল রহস্য খুব অল্প সময়ে উদঘাটন করা সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কমিশনার (দক্ষিন) মোয়াজ্জেম হোসেন ভূঁঞা।
তিনি জানান, এ ঘটনায় নিহতের ভাই মোঃ মনিরুল ইসলাম রিপন বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার (এডিসি) রুনা লায়লা, সিনিয়র সহাকারি পুলিশ কমিশনার মোঃ রাসেল, বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল ইসলাম-পিপিএম, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই বশির আহমেদ।