সারা দেশে চলা পরিবহন ধর্মঘট তুলে নেয়ার পর প্রত্যাহার করা হয় লঞ্চ ধর্মঘটও। সোমবার সকালে শুরু হয় বরিশাল নদীবন্দরে লঞ্চ চলাচল।
তবে লঞ্চের ভাড়া বৃদ্ধি পাওয়ায় ক্ষুব্ধ যাত্রীরা। অস্বাভাবিক ভাড়া বৃদ্ধিতে লঞ্চে যাতায়াত করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন অনেকেই।
সোমবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে বরিশাল নদীবন্দরে অভ্যন্তরীণ রুটের লঞ্চে যাত্রীর চাপ থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই যাত্রীর সংখ্যা কমতে থাকে। নদীবন্দর থেকে ফিরে যেতেও দেখা গেছে অনেককে।
ভোলা-বরিশাল নৌপথের এমভি আওলাদ লঞ্চের মাস্টার আব্দুর রহমান বলেন, ‘এই রুটে ভিআইপি সিটে ভাড়া ছিলে ৯০ টাকা, এখন হয়েছে ১২০ টাকা। ডেকের ভারা ছিল ৭০ টাকা, এখন হয়েছে ৯০ টাকা।
ভাড়া বাড়ায় যাত্রীদের সঙ্গে সুপারভাইজারের কথা-কাটাকাটি হয়েছে। সকালে ভোলা থেকে বরিশালে আসি। তখন যাত্রীসংখ্যা ভালোই ছিল। তবে বরিশাল থেকে যাত্রী পাচ্ছি না।’
বরিশাল-পাতারহাট-ইলিশা রুটের লঞ্চ এমভি রাজপাখির স্টাফ সাইদুল বলেন, ‘ডিজেলের দাম বাড়ায় লঞ্চ চলাচলে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ভাড়া বৃদ্ধির দাবিতে ধর্মঘট চলেছে।
ভাড়া এখন এমন বেড়েছে, এতে জরুরি প্রয়োজনের যাত্রী ছাড়া অন্য কেউ যাবে কি না তা সন্দেহ। সকাল থেকে লঞ্চঘাটে লোকজন কম দেখছি।
বরিশাল-ভোলা নৌপথের যাত্রী শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ভোলায় যেতে ৩০ টাকা বেশি দিতে সমস্যা হবে না। তবে ঢাকায় যাব কীভাবে এত টাকা ভাড়া দিয়ে। হিসাব ছাড়া ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। আগের ভাড়ার থেকে বর্তমানের নির্ধারিত ভাড়ার ব্যবধান অনেক। এ রকম ভাড়া হলে লঞ্চে কে উঠবে?’
জান্নাতুল ইসলাম নামের এক এনজিও কর্মকর্তা বলেন, ‘অফিসের কাজে বরিশাল-ঢাকায় প্রায়ই আপডাউন করতে হয়। এখন যে ভাড়া হইছে তাতে লঞ্চে যাতায়াত সম্ভব নয়। সরকার হিসাব-নিকাশ ছাড়াই ভাড়া বৃদ্ধির দাবি মেনে নিয়েছে।’
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল (যাত্রী পরিবহন) সংস্থার সদস্য নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘ঢাকা-বরিশাল রুটের লঞ্চের ডেকে আগে ভাড়া ছিল ২৫৫ টাকা, বর্তমানে হয়েছে ৩৫০ টাকা। সিঙ্গেল কেবিনে ভাড়া ছিল এক হাজার টাকা, এখন ভাড়া বেড়ে হয়েছে ১৪০০ টাকা।
‘ডাবল কেবিনের ভাড়া ছিল দুই হাজার টাকা। এখন ভাড়া হয়েছে ২৮০০ টাকা। সাড়ে ৩৫ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধির হিসাব অনুযায়ী ভিআইপি ও সেমি ভিআইপি কেবিনের ভাড়াও বাড়ানো হয়েছে। ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধির পর যাত্রী ভাড়া বৃদ্ধি ছাড়া আমাদের কোনো উপায় ছিল না।’
সংগঠনটির সহসভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, ‘ঢাকা-বরিশাল রুটে লঞ্চ চালাতে প্রতিদিন আমাদের চার থেকে পাঁচ লাখ টাকার তেল দরকার হয়। ডিজেলের দাম বাড়ায় যাত্রী ভাড়া না বাড়ালে প্রতিদিন প্রায় এক লাখ টাকা লোকসান হতো।
এই কারণেই ভাড়া বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছিলাম আমরা। সরকার নির্ধারিত ভাড়ায় আজ সকাল থেকে লঞ্চ চলাচল শুরু হয়েছে।’