স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল বরিশাল মহানগর এর সদস্য সচিব হলেও আ.লীগ শাসনামলে আমলে বরিশাল শিক্ষা বোর্ডে হিসাব সহকারী পদে চাকুরি পান মো. শহিদুল ইসলাম ওরফে বোর্ড শহিদ। গত ৫ আগস্টের পর ক্ষমতার অপব্যবহার করে পরপর দুইটি পদে পদোন্নতি নেন তিনি। এই বোর্ড শহিদের আপন ভাই ইমরান সিকদার বরিশাল- ৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কর্নেল জাহিদ ফারুক শামিমের বিশ্বস্ত কর্মী ছিলেন। অপর ভাই রাসেল সিকদার ছিলেন বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর সক্রিয় ক্যাডার ছিলেন। বর্তমানে ইমরান ও রাসেল পলাতক রয়েছে। শহিদ এই দুই ভাইয়ের প্রভাব বিস্তার করে আ.লীগ শাসনামলে শ্যালক পত্নী, ভ্রাতা পত্নী, খালাতো বোন সহ কয়েকজনকে দৈনিক হাজিরা ভিত্তিক কর্মচারী পদে বরিশাল শিক্ষা বোর্ডে চাকুরি দিতে বাধ্য করেন।
প্রাথমিক অনুসন্ধানে বেড়িয়ে এসেছে, ২০০০ সালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার রানীর হাট ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আ.লীগ নেতা লাল মিয়া (বোর্ড শহিদের মামা) এর মাধ্যমে বরিশাল-৬ আসলেন সাবেক সাংসদ মাসুদ রেজার সুপারিশে বরিশাল শিক্ষা বোর্ডে হিসাব সহকারী পদে চাকুরি পান মো. শহিদুল ইসলাম ওরফে বোর্ড শহিদ। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসলে শ্রমিক দলের সাথে যুক্ত হয়ে বিধিবহির্ভূতভাবে উচ্চতর স্কেল সহ নানা সুযোগ-সুবিধা নেয় বোর্ড শহিদ। বর্তমানে তিনি (বোর্ড শহিদ) বরিশাল মহানগর শ্রমিকদলের সদস্য সচিব হলেও আ.লীগ সরকারের আমলে হিসাব সহকারী থেকে সেকশন অফিসার পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত হন। সেই সময় সেকশন অফিসার পদ থেকে পদোন্নতি পেয়ে দ্বিতীয় শ্রেণীর পদমর্যাদার ভারপ্রাপ্ত সহকারী বিদ্যালয় পরিদর্শক পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত হয় বোর্ড শহিদ। তিনি ক্ষমতার প্রভাব বিস্তার করে হাইকোর্ট এবং সুপ্রিমকোর্টে বরিশাল শিক্ষা বোর্ড কর্মচারীদের পদোন্নতি নিয়ে দুটি মামলা চলমান অবস্থায় (মামলা নং-৯০৫৫/২০১১, ৯০৯/২০০০) শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যানের উপর চাপ সৃষ্টি করে তিনি নিজে একই সঙ্গে দুইটি (সহকারী পরিদর্শক ও উপ-পরিদর্শক) পদে পদোন্নতি সহ অবৈধ ভাবে ৩১জন কর্মচারীকে পদোন্নতি প্রদানে বাধ্য করেন বোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর ইউনুস আলী সিদ্দিকীকে। বর্তমানে বরিশাল মহানগর শ্রমিকদলের সদস্য সচিব হওয়ায় যখন তখন বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে বিক্ষোভ মিছিল করে উত্তপ্ত করে চলেছে।
অফিস চলাকালীন সময়ে কাজী আব্দুল জলিল নামে এক কর্মচারীর উপর হামলা চালিয়ে তাকে আহত করেন বোর্ড শহিদ। তার মতের বিরুদ্ধে যাওয়ায় বরিশাল বিএনপি অফিস পোড়ানো মামলায় আসামি করেছেন আবু জাফর সিকদার, মো. শহিদুল ইসলাম খান, শাহিন মিয়া, কাজী আব্দুল জলিল, বিমলচন্দ্র শীল ও ফরিদ উদ্দিন মিয়া এই ছয়জন কর্মচারীকে । তিনজন আসামি বোর্ড শহিদের সাথে রফা-দফার মাধ্যমে রেহাই পেলেও বাকি তিনজনের সাথে বনিবনা না হওয়ায় তারা এখনও হয়রানির শিকার হচ্ছে। এছাড়াও দলীয় প্রভাব বিস্তার করে তিনজন কর্মচারীকে বরখাস্ত করতে বোর্ড চেয়ারম্যানকে বাধ্য করেন বোর্ড শহিদ।
তার অত্যাচারে রেহাই পায়নি বরিশাল শিক্ষা বোর্ডে প্রেষণে আসা বিসিএস কর্মকর্তারাও। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে মোজাহার উদ্দিন বিশ্বাস কলেজের অধ্যক্ষ- প্রফেসর ড. ফাতেমা হেরেম কে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের সচিব পদে পদায়নের আদেশ জারি করেন। শিক্ষা বোর্ড কর্মচারী সংঘের সভাপতি পদ দখলকারী বোর্ড শহিদের বিরোধীতার কারণে সচিব পদে প্রফেসর ড. ফাতেমা হেরেম যোগদান করতে পারেননি। আত্ম সম্মানের ভয়ে তিনি পূর্বের কর্মস্থলে ফিরে গেছেন। অদ্যাবধি বোর্ডের সচিব পদ শূন্য রয়েছে। বোর্ড শহিদের নির্দেশ ছাড়া বরিশাল শিক্ষা বোর্ডে কোন কর্মচারীর বদলি এবং কোন প্রকার টেন্ডার সম্ভব হচ্ছে না।
এমনকি ক্ষমতার প্রভাব বিস্তার করে বোর্ড শহিদ তার শ্যালকের বউ, ভাইর বউ, খালাতো বোনসহ আত্মীয় আলিফ ও জাহিদকে দৈনিক হাজিরাভিত্তিক কর্মচারী হিসাবে বরিশাল শিক্ষা বোর্ডে চাকুরি দেন। এদের সহ প্রায় বিশ জন কর্মচারীকে বিধিবহির্ভূতভাবে স্থায়ী করার জন্য শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যানকে বিভিন্ন ভাবে চাপ প্রয়োগ করছেন। বোর্ড চেয়ারম্যান নিয়োগবিধি পরিপন্থি কাজে অপারগতা প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আন্দোলন ডাকেন বোর্ড শহিদ। তারই অংশ হিসাবে চলতি বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি বরিশাল শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে মিছিল এবং সমাবেশের ডাক দিয়েছেন কর্মচারীর সংঘের সভাপতি বোর্ড শহিদের। এই মিছিলে কর্মচারীরা উপস্থিক না হলে হামলা-মামলার হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন।
শ্রমিকদল নেতা বোর্ড শহিদের অমানবিক ও নিষ্ঠুর নির্যাতন থেকে রক্ষার্থে বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা স্থানীয় প্রশাসন ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দর কাছে হস্তক্ষেপ কামনা করছেন। বরিশাল শিক্ষা বোর্ড কর্মচারীর সংঘের সভাপতি মো. শহিদুল ইসলাম ওরফে বোর্ড শহিদের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ করেননি।
বরিশাল শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর ইউনুস আলী সিদ্দিকী বলেন- আমার আশেপাশে যারা আছে সবই শহিদের আত্মীয়-স্বজন।