অনলাইন ডেস্ক:: বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুনিবুর রহমানের সরকারি বাসভবনে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় দায়ের করা দুটি মামলায় সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহকে আসামি করা হয়েছে। এ দুটি মামলার অভিযোগপত্র আদালত গ্রহণ করলে আইন অনুযায়ী সাময়িক বরখাস্ত হতে পারেন মেয়র।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম শুক্রবার (২০ আগস্ট) বলেন, এ ঘটনা নিয়ে অবশ্যই তদন্ত হবে। মামলায় মেয়রকে অভিযুক্ত করে বলা হয়েছে, তার নেতৃত্বেই এ কাজগুলো সেখানে করা হয়েছে।
তিনি বলেন, স্বাভাবিকভাবে ভালো কাজে স্থানীয় সরকার বিভাগ প্রতিনিধিদের প্রশংসিত করে। মন্দ কাজের জন্যও শাস্তির বিধান আছে। বিভিন্ন সময় অনেকের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। কাউকে যদি দোষী পাওয়া যায়, তাহলে সবার জন্য আইন সমানভাবেই চলবে।
তিনি আরও বলেন, যদি কারো (জনপ্রতিনিধি) বিরুদ্ধে মামলা এবং চার্জশিট হয়, তাহলে আমাদের সাসপেন্ড (সাময়িক বরখাস্ত) করার বিধান আছে। আইনে যেভাবে শাস্তির বিধান উল্লেখ আছে, এগুলো পর্যালোচনা করে যদি কিছু পাওয়া যায়, তাহলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আইনে কী বলা আছে?
‘স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন, ২০০৯’ এর ১২ নম্বর ধারায় মেয়র ও কাউন্সিলরদের সাময়িক বরখাস্ত করা প্রসঙ্গে বলা আছে, ‘যেক্ষেত্রে কোনো সিটি করপোরেশনের মেয়র অথবা কাউন্সিলরের অপসারণের ধারা ১৩ এর অধীন কার্যক্রম আরম্ভ করা হয়েছে অথবা তার বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলায় অভিযোগপত্র আদালত কর্তৃক গৃহীত হয়েছে, সেক্ষেত্রে সরকার লিখিত আদেশের মাধ্যমে, ক্ষেত্রমত, মেয়র বা কোনো কাউন্সিলরকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করতে পারবে।’
এ আইনের ১৩ নম্বর ধারায় মেয়র অথবা কাউন্সিলরদের অপসারণের বিষয়েও বিস্তারিত উল্লেখ রয়েছে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধে আদালত থেকে দণ্ডিত হলে, অসদাচরণ বা ক্ষমতার অপব্যবহারের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হলে মেয়র অথবা কাউন্সিলর তার নিজ পদ থেকে অপসারণযোগ্য হবেন।
আইনে অসদাচরণের বিষয়েও ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। ব্যাখ্যায় বলা হয়, ‘অসদাচরণ’ বলতে ক্ষমতার অপব্যবহার, এই আইন অনুযায়ী বিধি-নিষেধ পরিপন্থী কার্যকলাপ, দুর্নীতি, অসদুপায়ে ব্যক্তিগত সুবিধা গ্রহণ, পক্ষপাতিত্ব, স্বজনপ্রীতি, ইচ্ছাকৃত অপশাসন, নির্বাচনী ব্যয়ের হিসাব দাখিল না করা বা অসত্য তথ্য দেওয়াকে বুঝাবে।
বুধবার (১৮ আগস্ট) রাতে ব্যানার অপসারণকে কেন্দ্র করে বরিশালে পুলিশ, আনসার ও স্থানীয় ছাত্রলীগ সদস্যদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। অভিযোগ উঠেছে, ওই রাতে ইউএনও’র সরকারি বাসভবনে হামলা চালায় স্থানীয় ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী ও সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা। এ সময় গুলির ঘটনায় আহত হন অনেকে।
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানায় দুটি মামলা দায়ের করা হয়। এরমধ্যে একটি মামলা দায়ের করেন সদর থানার ইউএনও মুনিবুর রহমান। অন্যটি করেন কোতোয়ালি মডেল থানার উপপরির্দশক (এসআই) শাহজালাল মল্লিক। দুই মামলাতেই প্রধান আসামি করা হয়েছে মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহকে।
এদিকে, মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহকে গ্রেফতার করার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন (বিএএসএ)। বৃহস্পতিবার কার্যনির্বাহী পরিষদের এক জরুরি সভা শেষে গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবির কথা জানায় অ্যাসোসিয়েশন।
বরিশাল জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের দাবি, ব্যানার অপসারণ করতে গিয়ে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ইউএনও’র বাধার মুখে পড়েন। ইউএনও দম্ভোক্তি করে অশোভন আচরণ করেন এবং সবার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতে থাকেন। পরিস্থিতি শান্ত করতে সেখানে যান মেয়র। তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন ইউএনও।
বৃহস্পতিবার বরিশালে সেরনিয়াবাত ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র গাজী নঈমুল হোসেন লিটু এ অভিযোগ করেন। এ ঘটনায় থানায় কোনো অভিযোগ না দিলেও বিচার বিভাগীয় তদন্ত ও প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়।
এ প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, আসলে বাস্তবে সেখানে কী ঘটনা ঘটেছিল, তা পর্যালোচনা করে বোঝা যাবে। আমরা সব খোঁজখবর নিচ্ছি। এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। এ ঘটনায় অবশ্যই তদন্ত হবে, তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।