প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরলে কোটা সংস্কার নিয়ে প্রজ্ঞাপনের আশ্বাস নানকের

লেখক:
প্রকাশ: ৭ years ago

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রীয় কাজে দেশের বাইরে আছেন। আমরা আন্দোলনকারীদের বলেছি, প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরে আসার পর অতি দ্রুত প্রজ্ঞাপন জারির ব্যবস্থা করব। আমরাও চাই এটি অতি দ্রুত বাস্তবায়ন হোক।’ শুক্রবার রাতে রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ সংলগ্ন সংসদ সদস্য ভবনে (ন্যাম ভবন) কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা শেষে তিনি এসব কথা বলেন।

তার এই আশ্বাসের প্রেক্ষিতে ৩০ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী দেশে ফেরার পর আগামী ৭ মে পর্যন্ত অপেক্ষার কথা জানিয়েছেন কোটা আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ। তবে আগামী ৩০ এপ্রিল সারাদেশের প্রত্যেক কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-শিক্ষকদের মতবিনিময় কর্মসূচির মতো অন্যান্য কর্মসূচি চলবে।

জাহাঙ্গীর কবির নানকের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান। তিনি বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশের বাইরে আছেন, আজকে আমাদের কথা হয়েছে। তারা বললেন, প্রধানমন্ত্রী ৩০ তারিখ আসবেন। তিনি সংসদে কোটা ব্যবস্থা বাতিলের ঘোষণা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশে না থাকলে তারা সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। তিনি দেশে আসার পর খুব দ্রুত প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। এ ব্যাপারে তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশের ক্যাম্পাসগুলোতে অবশ্য আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা আতঙ্কে রয়েছেন। তাদের এ আতঙ্ক দূর করতে আগামী ৩০ এপ্রিল প্রতিটি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হবে। চলমান আতঙ্ক থেকে যাতে শিক্ষার্থীরা বেরিয়ে আসতে পারে সে ব্যাপারে শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা হবে বলে জানিয়েছেন রাশেদ খান।

তিনি বলেন, ‘আগামী ৭ তারিখের আল্টিমেটাম আমাদের থাকবে। এরই মধ্যে বিভিন্ন কর্মসূচিও চলবে। তাদের সঙ্গে যেহেতু আমরা কথা বললাম, তাই ৭ তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষা করব। এরমধ্যে সরকার সিদ্ধান্ত না নিলে কেন্দ্রীয় কমিটিতে আলোচনা করে পরবর্তী কর্মসূচি ব্যাপারে সংবাদ সম্মেলন করে জানাব।’

এর আগে আলোচনা শেষে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আজ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক ও সাংগঠনিক এনামুল হক শামিম ভাইয়ের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। আমরা যে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি, সে বিষয়গুলো উনাদের জানিয়েছি। আমাদের দাবিগুলোও জানিয়েছি। তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, বাংলাদেশের কোথাও আন্দোলনকারী কোনও শিক্ষার্থীকে অযথা হয়রানি করা হবে না। তবে ভিসি স্যারের বাসায় যারা হামলা চালিয়েছে আমরা তাদের বিচার চাই বলে জানিয়েছি। আমরা বলেছি, ভিসি স্যারের বাসায় যারা আগুন দিয়েছে, ভাঙচুর করেছে, তারা আমাদের আন্দোলনকারী ছাত্র নয়। আমরা তাদের বিচার চাই।’

আন্দোলনকারী নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা শেষে জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘আমাদের প্রাণখোলা কথা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী জাতীয় সংসদে কোটা বাতিলের ঘোষণা দিয়েছেন। এখন ঘোষণাটি কখন কিভাবে কার্যকর হবে সেটাই বিষয়। প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রীয় কাজে দেশের বাইরে আছেন। সরকারের যে কোনও প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে হলে যে প্রক্রিয়াগুলো রয়েছে সেগুলো সম্পন্ন হলেই অতি দ্রুত প্রজ্ঞাপন আকারে আসবে।’

তিনি আন্দোলনকারীদের আশ্বস্ত করে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরে আসার পর অতি দ্রুত প্রজ্ঞাপন জারির ব্যবস্থা করব। আমরাও চাই এটি অতি দ্রুত বাস্তবায়ন হোক।’

একইসঙ্গে কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নেওয়া কোনও একজন ছাত্রকেও হয়রানি করা হবে না বলে আশ্বস্ত করেন আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।  তিনি বলেন, ‘এই শিক্ষার্থীদের অকারণে পুলিশি বা অন্য কোনও ধরনের হয়রানি করা হবে না। তারা পরিষ্কার বলেছে, ভিসির বাড়িতে যে তাণ্ডব হয়েছে সেটার বিচার তারাও চান। সুনির্দিষ্টভাবে যারা হামলা করেছে তাদের বিচার আন্দোলনকারীরাও দাবি করেছেন।’

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানকের আহ্বানে শুক্রবার রাত ৯টা ৪০ মিনিটে বৈঠকে বসেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় নানকের সঙ্গে ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামিম। সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুনের নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বৈঠকে অংশ নেয়।

উল্লেখ্য, কোটা সংস্কারের দাবিতে গত ৮ এপ্রিল থেকে বড় আকারে আন্দোলন শুরু হয়। ১১ এপ্রিল শাহবাগ এবং ঢাকার অন্যত্র সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কারের দাবিতে সরব হন। দেশের নানা জায়গায় সড়ক অবরোধ হয় এ দাবিতে। ঢাকায় আন্দোলনকারীরা কোটা সংস্কারে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা দাবি করেন। ১১ এপ্রিল দুপুর ১২টার দিকে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক জানান, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তারা দেখা করেছেন। তিনি সব ধরনের কোটা বাতিলের কথা বলেছেন। এদিন বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে কোটা বাতিলের ঘোষণা দেন। এরপর থেকেই প্রধানমন্ত্রীর এ ঘোষণা প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশের দাবি জানিয়েছে আসছে আন্দোলনকারীরা।