মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফীকে যৌন নিপীড়নের পর আগুনে পুড়ে হত্যার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সহ-সভাপতি রুহুল আমিনকে আটক করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। শুক্রবার বিকেলে পৌরসভার তাকিয়া রোড এলাকার নিজ কার্যালয় থেকে তাকে আটক করা হয় বলে জানিয়েছেন দলীয় একাধিক সূত্র।
ফেনী পিবিআইর অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার মনিরুজ্জামান জানান, ‘রুহুল আমিনকে তার নিজ এলাকা থেকে আটক করা হয়েছে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পিবিআইয়ের একাধিক সূত্র জানায়, সরাসরি হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া শাহদাত হোসেন শামীম স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানান- নুসরাতের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার পর তিনি দৌড়ে নিচে নেমে উত্তর দিকের প্রাচির টপকে বের হয়ে যান। বাইরে গিয়ে মোবাইল ফোনে বিষয়টি রুহুল আমিনকে জানান। প্রত্যুত্তরে রুহুল আমিন বলেন, ‘আমি জানি। তোমরা চলে যাও।’
সোনাগাজী আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা জানান, রুহুল আমিনসহ আওয়ামী লীগের নাম ভাঙ্গিয়ে কিছু হাইব্রিড নেতাকে আওয়ামী লীগের নব্য নেতা বানিয়ে দেওয়ার কারণে আজ সোনাগাজী আওয়ামী লীগ কঠিন পরীক্ষায় পড়েছে। দলের ভাবমূর্তি দারুনভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
এই রুহুল আমিনের ব্যাপারে নেতারা দুঃখ করে বলেন, তার চৌদ্দগোষ্ঠী সকলে বিএনপি করে। সেও কোনদিন আওয়ামী লীগ করেনি। তাকে হঠাৎ করে আওয়ামী লীগের উপজেলা সভাপতি করে দেওয়ায় এলাকার প্রবীন নেতারা ক্ষোভ জানিয়েছিলো।
রুহুল আমিন সম্পর্কে বলতে গিয়ে নেতারা বলেন, তার বাড়ি মধ্যম চর চান্দিয়া কুচ্চাখোলা গ্রামে। বর্তমানে তার জৌলশপূর্ণ বাড়ি সোনাগাজীর তাকিয়া রোডের জেলে পাড়া এলাকায়। তার বাবা কোরবান আলী গ্রামে বদলা দিত। তার কোন লেখাপড়া ছিল না। তার পরিবার ছিল অর্থনৈতিক দিক থেকে খুবই করুণ। পাকিস্তান আমলে উক্ত কোরবান আলী জাহাজে চাকরি নেয়। চাকরির সুবাদে সে সিডিসি (নলি) নিয়ে দেশ-বিদেশ ঘুরার সুযোগ পায়। পরে উক্ত কোরবান আলী আমেরিকা পোর্টে জাহাজ ভিড়লে গভীর রাতে সে জাহাজ থেকে পানিতে লাফ দিয়ে পড়ে পালিয়ে ডাঙ্গায় উঠে। এরপর তার ভাগ্যের চাকা খুলতে থাকে।
সে দীর্ঘদিন আমেরিকায় কাজ করে দেশ থেকে তার পরিবার পরিজন সবাইকে নিয়ে যায়। ইতিমধ্যে রুহুল আমিন ওরফে গুজা রুহুলের কোন লেখাপড়া না থাকলেও (ব কলমী) দুবাইতে রেন্ট এ কারের চালক হিসেবে চাকরি নিয়ে দেশ ছেড়ে চলে যায়। বেশ কয়েক বছর সেখানে অবস্থান করেন এবং বেশ কিছু টাকার মালিক হয়ে সে দেশে ফিরে এসে সোনাগাজীতে আওয়ামী লীগের সহ-সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মৃত মাহ্মুদ হোসেন নোমানের সাথে চলাফেরা করতে করতে মধুর লোভে আওয়ামী লীগার হয়ে যায়।
স্থানীয় নেতারা জানান, এ ব্যক্তি কোনদিন আওয়ামী লীগের কোন সদস্য ছিল না। হঠাৎ করে টাকার পাহাড় হয়ে যাওয়ায় উক্ত রুহুল আমিন মোটা অংকের টাকা খরচ করে আওয়ামী লীগের পরীক্ষিত সৈনিক কাউন্সিলের নির্বাচিত সভাপতি ও সাবেক উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফয়েজুল কবিরকে সরিয়ে হাইব্রিড নেতা রুহুল আমিন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির পদটি দখল করে নেন বলে আওয়ামী লীগ নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান এবং এ সকল হাইব্রিড নেতাদের কারণে আজ সোনাগাজী আওয়ামী লীগ দৈন্যদশায় পরিণত হয়েছে বলে দুঃখ প্রকাশ করেন।
এদিকে রুহুল আমিনের সাথে থাকত তার সেকেন্ড-ইন-কমান্ড আবদুল হালিম সোহেল এবং যুবদলের ক্যাডার খুরশিদ আলম। এ দুজন আবার আপন চাচাত ভাই। নুসরাত জাহান রাফীর গায়ে আগুন দেওয়ার ঘটনার পর তার সেকেন্ড-ইন-কমান্ড আবদুল হালিম সোহেল মোটর সাইকেলে করে সোনাগাজী থেকে নুর উদ্দিন এবং শামীমকে কোম্পানীগঞ্জ পার করে দেয় বলে এলাকার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।
অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলার স্ত্রী পুত্র কন্যা সন্তান বাড়ি থেকে পলাতক: রাফী হত্যার ঘটনার পর অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলার স্ত্রী সোনাগাজী জনতা ব্যাংক থেকে ১৮ লক্ষ টাকা উত্তোলন করে। উক্ত টাকা সোনাগাজী থানার ওসি মোয়াজ্জেমসহ রাফীর গায়ে আগুন দেয়ার সাথে জড়িতদেরকে ভাগ-বাটোয়ারা করে দিয়েছে বলে একটি বিশ্বাস্ত সূত্র জানায়।
জানা গেছে, তার স্বামীকে বাঁচানোর জন্য ওসিকে ১০ লক্ষ টাকা প্রদান করা হয়। এ ঘটনার পর থেকে তার স্ত্রী পুত্র কন্যা সন্তানদেরকে নিয়ে গা ঢাকা দিয়েছে। এলাকাবাসী জানান, তার স্ত্রীকে গ্রেফতার করতে পারলে টাকার উৎসসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উদ্ঘাটিত হবে।