নেপালে বিমান দুর্ঘনায় নিহত খুলনার আলিফুজ্জামান আলিফের মরদেহ দাফন করা হয়েছে। শুক্রবার বাদ জুম্মা খুলনার রূপসা উপজেলার বেলফুলিয়া ইসলামিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে জানাজা শেষে রাজাপুর মাদরাসা কবরস্থানে তার মরদেহ দাফন করা হয়। জানাজায় শত শত মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
শুক্রবার ভোর ৪টা ২০মিনিটে আলিফুজ্জামান আলিফের (৩২) মরদেহ নিজ গ্রাম রূপসা উপজেলার আইচগাতী গ্রামের বারো পূণ্যের মোড়ের বাড়িতে পৌঁছায়। মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্স তার নিজ বাড়িতে পৌঁছালে সেখানে নারী-পুরুষসহ শত শত মানুষ আলিফের মরদেহ একনজর দেখার জন্য ছুটে আসে।
ভোর রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙে আলিফের মা-বাবাসহ আত্মীয়- স্বজনের কান্নায় তখন ভারি ওঠে পুরো এলাকা। কফিন জাপটে ধরে প্রিয় সন্তানের জন্য ঢুকরে ঢুকরে কাঁদতে থাকেন আলিফের মা মনিকা পারভীন। তিনি বুক চাপড়াতে চাপড়াতে আর্তনাদ করে বলতে থাকেন- বাবা নেপালে যাওয়ার আগে তুই আমাকে বলেছিলি ‘মা কাঠমান্ডু পৌঁছেই তোমাকে ফোন দেব।’ তুই তো আর আমারে মোবাইলে ফোন করলি না? বলেছিলি ‘পাঁচদিন পরই ফিরে আসব।’ তোর তো এভাবে ফিরে আসার কথা ছিল না! তুই কি আর আমাকে মা বলে ডাকবি না বাবা? একবার বল না মা ‘তোমার আলিফ তোমার কোলে ফিরে এসেছে।’ আলিফের মায়ের আর্তনাদে এ সময় শোকে ভারি ওঠে গোটা পরিবেশ।
বাদ জুম্মা রূপসা উপজেলার বেলফুলিয়া ইসলামীয়া হাইস্কুল মাঠে আলিফুজ্জামানের নামাজের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় খুলনা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হারুনুর রশিদ, জেলা বিএনপি সভাপতি অ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম মনা, রূপসা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইলিয়াছুর রহমান, আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট সুজিৎ অধিকারী, কামরুজ্জামাল জামাল, আক্তারুজ্জামান বাবু, অসিত বরণ বিশ্বাস, শেখ আবু হানিফ, ইউপি চেয়ারম্যান অধ্যাপক আশরাফুজ্জামান বাবুল, শফিকুর রহমান পলাশ, ইউপি চেয়ারম্যান সাধন অধিকারী, সাবেক চেয়ারম্যান খান জুলফিকার আলী জুলু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টা ৫৫মিনিটে মোহাম্মদ আলিফুজ্জামান, নজরুল ইসলাম ও পিয়াস রায়ের মরদেহবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারল্যাইন্সের বিজি ০৭২ নামে একটি ফ্লাইট শাহজালাল বিমানবন্দরে অবতরণ করে। পরে বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষে আলিফুজ্জামানের বড় ভাই আশিকুর রহমান হামিম ও তার স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী শাহজাহান কামাল।
বাদ মাগরিব রাজধানীর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে আলিফের জানাজা শেষে খুলনার উদ্দেশে রওনা দেয় মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্স। শুক্রবার ভোর ৪টা ২০মিনিটে মরদেহ পৌঁছায় বাড়িতে।
খুলনা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ও বঙ্গবন্ধু ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ছিলেন আলিফুজ্জামান। খুলনার সরকারি বিএল কলেজ থেকে এবার রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মাস্টার্স পরীক্ষা দিচ্ছিলেন তিনি। তিন ভাইয়ের মধ্যে আলিফুজ্জামান ছিলেন দ্বিতীয়। তার বাবা মুক্তিযোদ্ধা মোল্লা আসাদুজ্জামান।
আলিফুজ্জামান বাণিজ্য মেলা দেখার জন্য গত ১২ মার্চ নেপালের উদ্দেশ্যে গিয়েছিলেন। ওইদিন নেপালের ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ৭১ জন যাত্রী নিয়ে অবতরণকালে বিধ্বস্ত হয় ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট। এতে নিহত হন বিমানের পাইলট ও কো-পাইলটসহ ৫১ জন। এদের মধ্যে ২৬ জনই বাংলাদেশি।