ঢিমেতালে চলছে বাস্তবায়ন

লেখক:
প্রকাশ: ৭ years ago

  • ২০১৫ সালে মেয়র নির্বাচিত হন আনিসুল হক
  • গত বছরের ৩০ নভেম্বর আনিসুল হক মারা যান
  • আনিসুল হকের কিছু উদ্যোগ নগরবাসীর দৃষ্টি কাড়ে
  • উদ্যোগ চালিয়ে নেওয়ার উদ্যমী নেতৃত্ব এখন অনুপস্থিত
  • ঢাকায় আনিসুল হকের মতো শক্তিশালী নেতৃত্ব দরকার

ঢাকার চিহ্নিত সমস্যাগুলোর সমাধানে কাজ শুরু করেছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক। মেয়র হিসেবে তাঁর নেওয়া বেশ কিছু উদ্যোগ নগরবাসীর দৃষ্টি কেড়েছিল। বাসযোগ্য ঢাকা গড়তে আনিসুল হক আরও উন্নয়নকাজের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের আগে গত বছরের ৩০ নভেম্বর তিনি মারা যান।

আনিসুল হকের মৃত্যুর পর তাঁর নেওয়া উদ্যোগগুলোর কয়েকটির কাজ চলছে ঢিমেতালে। নগরবিদ ও ডিএনসিসির কর্মকর্তারা বলছেন, আনিসুল হকের উদ্যোগগুলো চালিয়ে নেওয়ার মতো উদ্যমী নেতৃত্ব এখন অনুপস্থিত। এ কারণে এসব কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়েছে।

নগর গবেষণা কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকা শহরে আনিসুল হকের মতো শক্তিশালী নেতৃত্ব দরকার। যাঁরা বর্তমানে দায়িত্বে আছেন, তাঁরা চাইলে আনিসুল হকের উদ্যোগগুলো বাস্তবে রূপ দিতে পারেন। উদ্যোগগুলো বাস্তবায়িত না হলে নগরবাসী বঞ্চিত হবে।

২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন আনিসুল হক। মেয়রের দায়িত্বে থাকা অবস্থায় বিলবোর্ড অপসারণ, অস্থায়ী ময়লা রাখার ঘর বা সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন নির্মাণ, ঠিকাদার নিয়োগে ই-টেন্ডারিং ব্যবস্থা চালু, ডিএনসিসি এলাকায় প্রতিবন্ধীবান্ধব ফুটপাত নির্মাণ, গুলশান ও বারিধারা এলাকায় দূতাবাসের সামনের ফুটপাতে গড়ে তোলা স্থাপনা উচ্ছেদ, পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের দৈনিক মজুরি বাড়ানো ছিল আনিসুল হকের উল্লেখযোগ্য কাজ।

কিছু উদ্যোগের বর্তমান অবস্থা
চার হাজার বাস: ঢাকা শহরের পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে চার হাজার বাস নামানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন আনিসুল হক। সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, এ পরিকল্পনাটি বাস্তবায়ন করতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকনের নেতৃত্বে একটি কমিটি করা হয়েছে। ঢাকা সড়ক পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) মাধ্যমে এই পরিকল্পনাটি বাস্তবায়ন করা হবে।

ইউটার্ন প্রকল্প: ঢাকার যানজট কমাতে সাতরাস্তা থেকে উত্তরা পর্যন্ত ১১টি ইউটার্ন নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল আনিসুল হকের। ডিএনসিসির সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলোর কাছ থেকে জমি বুঝে না পাওয়ায় অনেকটা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে প্রকল্পের কাজ।

কাজটির অগ্রগতি সম্পর্কে প্রকল্প পরিচালক ও ডিএনসিসির নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার মাহবুব আলম প্রথম আলোকে বলেন, উত্তরার র‍্যাব-১–এর কার্যালয়, রাজলক্ষ্মী কমপ্লেক্স ও কাওলা এলাকায় নির্মাণকাজ চলছে। প্রকল্পটির সংশোধিত পরিকল্পনা পাসের অপেক্ষায় আছে। ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করা হয়েছে।

গাবতলীর জায়গা: গাবতলী এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে দখলে থাকা ৫২ একর জমি উদ্ধার করে ডিএনসিসি। একটি প্রকল্পের অধীনে ওই জায়গায় কারখানা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কারখানা, প্রশাসনিক ভবন, বাস ও ট্রাক ডিপো, ময়লা রাখার অস্থায়ী ঘরসহ আরও কিছু স্থাপনা করার পরিকল্পনা ছিল। গত এক বছরে প্রকল্পের কাজ শুরু না করায় উদ্ধার করা জায়গার বেশির ভাগ পুনরায় দখল হয়ে গেছে।

তেজগাঁও ট্রাক টার্মিনাল ও অন্য ১০টি জায়গা: দীর্ঘদিন দখলে থাকা সাতরাস্তা থেকে তেজগাঁও রেলক্রসিং পর্যন্ত সড়কটি দখলমুক্ত করেন মেয়র আনিসুল হক। এখন সড়কের পাশে সারি করে ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান দাঁড় করিয়ে রাখা হচ্ছে।

তেজগাঁও ট্রাক টার্মিনাল ছাড়াও আনিসুল হকের উদ্যোগে গাবতলী, মহাখালী, আবদুল্লাহপুরসহ আরও আটটি এলাকা পার্কিংমুক্ত ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে পার্কিং ফিরে আসতে শুরু করেছে মহাখালী, আবদুল্লাহপুর এলাকায়।

এলইডি বাতি ও সিসি ক্যামেরা: আনিসুল হক ডিএনসিসি এলাকায় এলইডি বাতি বসানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এ বিষয়ে একটি প্রকল্প একনেকে অনুমোদন পায়। কিন্তু চলতি অর্থবছরেও এলইডি বাতি বসানোর প্রকল্পে অগ্রগতি নেই।

সবুজ ঢাকা: ‘সবুজ ঢাকা’ প্রকল্পের আওতায় পাঁচ লাখ গাছের চারা রোপণের পরিকল্পনা ছিল ডিএনসিসির। প্রকল্পটিতে কোনো টাকা বরাদ্দ না থাকায় কাজ এগোচ্ছে না।

১০০ গণশৌচাগার: আনিসুল হক একাধিকবার ১০০টি গণশৌচাগার নির্মাণ করা হবে বলে জানিয়েছিলেন। ডিএনসিসি সূত্রে জানা যায়, গণশৌচাগার নির্মাণের মতো জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না। তাই পদচারী–সেতুর নিচের জায়গায়, মার্কেট, পার্কে শৌচাগার নির্মাণের বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে।

আনিসুল হকের নেওয়া উদ্যোগের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিএনসিসির প্যানেল মেয়র জামাল মোস্তফা বলেন, আনিসুল হকের শুরু করা কাজগুলো থেমে নেই, চলমান আছে। ডিএনসিসির কাউন্সিলর, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা মিলে তাঁর নেওয়া পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়নের চেষ্টা করছেন।

জাতীয়প্রচ্ছদবরিশালরাজনীতি এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন:
কমলাপুর রেলস্টেশনের ঘাস নিয়ে লাইভ করার পর এবার ট্রেনে ওঠার সময় নারী ও বৃদ্ধাদের ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ফের ফেসবুক লাইভ করলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। বৃদ্ধ মা-বাবা, স্ত্রী ও বাচ্চাদের নিয়ে যারা রেলে চলাফেরা করেন তাদের প্রতি কি একটু সহায় হবেন- এমন আহ্বান জানান তিনি। তিনি প্রশ্ন তোলেন, কেউ যদি বউ-বাচ্চা, বৃদ্ধা মা-বাবাকে নিয়ে ট্রেনে উঠতে চান তা হলে বউ থাকবে কই আর মা-বাবা থাকবে কই। শুক্রবার (৫ জুলাই) রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ফেসবুকে লাইভে এসে এসব কথা বলেন ব্যারিস্টার সুমন। লাইভে এসে প্ল্যাটফর্ম থেকে ট্রেনে ওঠার সিঁড়ির দূরত্ব দেখিয়ে সুমন বলেন, ‘এই ট্রেনটাকে মিটার গেজ (পরে সংশোধন করে বলেন ব্রডগেজ) বলা হয়। আমার প্রশ্ন হলো-প্ল্যাটফ্রম থেকে দূরত্ব বা উচ্চতা কত? ব্রিটিশ আমলের ট্রেনগুলো ছিল এমন। আপনারা (রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ) নতুন ট্রেন আনলেন কিন্তু প্ল্যাটফর্ম এখনো পুরনো।’ রেলওয়ে স্টেশনে উপস্থিত লোকদের দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘দেখেন সবাই, প্ল্যাটফর্ম থেকে ট্রেনের উচ্চতা দোতলার সমান। কোনো স্টেশনে ট্রেনটি তিন মিনিট থামে। তিন মিনিটে ৫০ জন মানুষ প্রায় দুই তলার সমান উচ্চতায় ওঠা কি সম্ভব?’ রেলমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে ব্যারিস্টার সুমন বলেন, ‘রেলমন্ত্রী, ট্রেন আপনি অনেক উঁচু বানিয়ে দিছেন। আর প্ল্যাটফর্ম এখানে বিট্রিশ আমলের। আমি কমলাপুর সেন্ট্রাল স্টেশন থেকে বলছি। আর গ্রামের স্টেশনগুলোর অবস্থা তো আরও খারাপ। সেখানে ট্রেনে উঠতে তো রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয়। বউ বাচ্চা নিয়ে ওঠা একটা বে-ইজ্জতের কারবার।’ তিনি আরও বলেন, ‘দুনিয়া এগোচ্ছে, সব কিছু এগোচ্ছে। রাতারাতি পরিবর্তন করতে পারবেন না। তবে ব্রেইনে আনেন পরিবর্তন করার। আপনারা বউ-বাচ্চা লইয়া ট্রেনে যাতায়াত করবেন কি-না জানি না। তবে, এই প্ল্যাটফর্ম ট্রেনের সমান করতে কোটি কোটি টাকার দরকার পড়বে না। আশা করি রেলমন্ত্রীসহ সকলেই এর প্রতি সদয় হবেন।’ এর আগে (৩০ মে) ব্যারিস্টার সুমন স্টেশনের সামনে রেললাইনের ওপর বেড়ে ওঠা ঘাস কেটে পরিচ্ছন্ন করার অনুরোধ জানিয়ে তার নিজের ফেসবুক পেজে লাইভ দেন। এর পরদিনই (শুক্রবার) সেসব ঘাস কেটে পরিষ্কার করে ফেলে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। পরিবারকে গ্রামের বাড়িতে পাঠানোর জন্য ট্রেনে তুলে দিতে কমলাপুর রেলস্টেশনে গিয়ে ফেসবুক লাইভে আসেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। সেখানে তিনি দেখেন, রেললাইনের ওপর বড় বড় ঘাস জন্মেছে। যা কাটার জন্য কারো সময় নেই। ব্যারিস্টার সুমন বলেন, ‘রেলের সময় নিয়ে আমার কোনো অভিযোগ নেই। মোটামুটি ভালোই চলতেছে। এজন্য রেল কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাই।’ ওই লাইভে তিনি আরও বলেন, এটা দেশের সবচেয়ে বড় রেলস্টেশন। এটা কেন্দ্রীয় রেল স্টেশন। এ সময় তিনি এক হাত লম্বা লম্বা ঘাস দেখিয়ে বলেন, ‘কিছু লোক লাগিয়ে ঘাসগুলো পরিষ্কার করলে স্টেশনটা অনেক সুন্দর হয়ে যেত।’
৬ years ago