ট্রেন সংকট ও মূল্যবৃদ্ধিতে স্থবির ভারতের চাল রপ্তানি

লেখক:
প্রকাশ: ৩ years ago

ভারতে মালবাহী ট্রেনের ঘাটতিতে আটকে গেছে চলতি মাসে নির্ধারিত চাল রপ্তানির এক-তৃতীয়াংশ চালান। কবে নাগাদ ট্রেন মিলবে তা নিশ্চিত না হওয়ায় বিলম্ব ফি এড়াতে আগামী ফ্রেব্রুয়ারি মাসের চালানের জন্য নতুন চুক্তি করাও বন্ধ করে দিয়েছেন ভারতীয় চাল ব্যবসায়ীরা। শিল্প সংশ্লিষ্টদের বরাতে সোমবার (১৭ জানুয়ারি) এক বিশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য জনিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের বৃহত্তম চাল রপ্তানিকারক ভারতের ব্যবসায় স্থবিরতা নেমে আসায় চালের দাম বাড়ানোর সুযোগ পাচ্ছে থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, ভিয়েতনামের মতো প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলো। রপ্তানিতে ধীরগতির কারণে ভারত সরকার কৃষকদের কাছ থেকে চাল সংগ্রহ বাড়াতে বাধ্য হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

 

 

ডিলাররা জানিয়েছেন, চলতি মাসে ১৫ লাখ টন চাল রপ্তানির লক্ষ্য ছিল ভারতের। কিন্তু মালবাহী ট্রেনের অভাবে ছত্তিশগড় থেকে দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় বন্দরগুলোতে পাঁচ লাখ টনের বেশি অ-বাসমতি চাল পরিবহন আটকে গেছে।

 

 

 

কৃষিপণ্য ব্যবসায়ী ওলাম ইন্ডিয়ার চাল ব্যবসার ভাইস-প্রেসিডেন্ট নিতিন গুপ্ত বলেন, মালবাহী ট্রেনের ঘাটতির কারণে কার্গোগুলো উৎপাদন কেন্দ্র থেকে বন্দরে যেতে পারেনি। ট্রেন কবে মিলবে তা স্পষ্ট না হওয়ায় কেউ নতুন কার্গো চাচ্ছেও না।

 

জানা যায়, কয়েক মাস আগে ভারতের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে ভয়াবহ কয়লা ঘাটতি দেখা দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে চলতি শীত মৌসুমে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে ট্রেনের বগিগুলোতে থার্মাল কয়লা পরিবহন করছে ভারতীয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ব্যবহার হচ্ছে সার পরিবহনেও।

 

 

ভারতের বৃহত্তম চাল রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান সত্যম বালাজির নির্বাহী পরিচালত হিমাংশু আগারওয়াল বলেন, চালানে বিলম্ব হওয়ায় মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছেন চাল রপ্তানিকারকরা। এমনিতেই জাহাজ ভাড়া বেড়ে দৈনিক ৩০ হাজার মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে, তার ওপর অনেক রপ্তানিকারককে পাঁচ লাখ ডলার পর্যন্ত বিলম্ব ফি দিতে হচ্ছে। ফলে তাদের লাভ বলে আর কিছু থাকছে না।

 

চড়া বিলম্ব ফি’র ক্ষতি পোষাতে ভারতীয় চাল ব্যবসায়ীরাও চালানের খরচ বাড়াতে শুরু করেছেন। এরই মধ্যে সেখানে পাঁচ শতাংশ ভাঙা আধাসেদ্ধ চালের দাম বেড়ে প্রতি টন ৩৮০ মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা বিগত ছয় মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।

 

 

 

ভারতের চাল রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি বি ভি কৃষ্ণা রাও জানান, ভারতীয় চালের মূল্যবৃদ্ধি ও চালানে বিলম্বের কারণে কিছু ক্রেতা থাইল্যান্ড, মিয়ানমারের মতো প্রতিদ্বন্দ্বী রপ্তানিকারকদের দিকে ঝুঁকছে।

 

থাইল্যান্ডে গত সপ্তাহে পাঁচ শতাংশ ভাঙা চালের দাম বেড়ে প্রতি টন ৪০৪ থেকে ৪০৫ ডলারে পৌঁছেছে, যা ২০২১ সালের মধ্য-জুলাইয়ের পর থেকে সর্বোচ্চ।

 

কৃষ্ণা রাও বলেন, ট্রেনের বগির সংখ্যা বাড়িয়ে আমাদের সাহায্য করার জন্য ভারতীয় বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেছি। তবে এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য রয়টার্সের অনুরোধে সাড়া দেয়নি ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রণালয় দুটি।

 

এক ডিলার জানান, অতীতে ট্রেনের বগি না পাওয়া গেলে সড়কপথে চাল পরিবহন করতেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। কিন্তু ডিজেলের দাম রেকর্ড পরিমাণে বেড়ে যাওয়ার পর গত ছয় মাস যাবৎ ট্রাকমালিকরাও পরিবহন খরচ বাড়িয়ে দিয়েছেন।

 

তিনি বলেন, অন্তত কাছাকাছি মাসের চালানগুলোর জন্য এশিয়া ও আফ্রিকার ক্রেতারা থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, পাকিস্তানে চলে যাচ্ছে। ফলে মার্চ প্রান্তিকে ভারতের চাল রপ্তানি কমে যেতে পারে।

 

সরকারি তথ্যমতে, ২০২১ সালে বিশ্বব্যাপী চালের চালানের প্রায় অর্ধেক ছিল ভারতের। গত বছর তাদের চাল রপ্তানি ২০২০ সালের তুলনায় ৪৫ শতাংশ বেড়ে রেকর্ড ২ কোটি ১৪ লাখ টনে পৌঁছায়, যা পরবর্তী তিন বৃহত্তম চাল রপ্তানিকারক থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও পাকিস্তানের সম্মিলিত রপ্তানির চেয়েও বেশি।

 

সত্যম বালাজির হিমাংশু বলেন, চলতি বছর ভারতে রেকর্ড পরিমাণ চাল উৎপাদন হয়েছে এবং দাম এখনো প্রতিযোগিতামূলক। কিন্তু লজিস্টিক সমস্যাগুলো রপ্তানি কমিয়ে দিচ্ছে।