ঝুপড়িতে থাকা দম্পতি পেলেন পাকাঘর, চড়লেন এসিল্যান্ডের গাড়িতে

লেখক:
প্রকাশ: ৪ years ago

প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে জমিসহ পাকাঘর পেলেন বাগেরহাট সড়কের পাশে ঝুপড়ি ঘরে থাকা বৃদ্ধ দম্পতি রতন কুমার বিশ্বাস (৮০) ও মনিরা বেগম (৬৫)। বৃহস্পতিবার (৪ মার্চ) দুপুরে বাগেরহাট ট্রাফিক মোড়-দাসপাড়া সড়কের মেগনিতলাস্থ এলাকার ঝুপড়ি ঘর থেকে সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমির (এসিল্যান্ড) ব্যবহৃত গাড়িতে করে তাদের রনসেন গুচ্ছ গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আগে থেকে নির্ধারণ করে রাখা দুই কক্ষের একটি পাকাঘরে তুলে দেয়া হয় এই দম্পতিকে। বৃদ্ধ বয়সে জমিসহ পাকাঘর, চৌকি, খাবার ও নতুন পোশাক পেয়ে খুশি অসহায় এই বৃদ্ধ দম্পতি।

বৃদ্ধ রতন কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু স্বীকৃতি পাইনি। আবেদন করেছি মন্ত্রণালয়ে, কী হবে জানি না। বাবার যত সম্পদ ছিল মানুষে জোরপূর্বক জাল দলিল করে দখল করে নিয়েছে। এখন আমার দখলে কোনো জমি নেই। ১০ বছরের বেশি সময় মেগনিতলা রাস্তার পাশে একটি ঝুপড়ির মধ্যে থাকতাম। বিভিন্ন সময় অনেকেই অনেক কিছু দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু কিছুই পাইনি। আজকে প্রধানমন্ত্রীর দয়ায় একটি পাকাঘর পেয়েছি। যাদের চেষ্টায় আমাদের এই ঘর প্রদান করা হলো তাদের ধন্যবাদ জানাই। মরার আগ পর্যন্ত পাকাঘরে থাকতে পারব—এই ভেবেই মনে খুব আনন্দ লাগছে।’ এরপর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে মরতে চাই বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন এই বৃদ্ধ।

রতন কুমারের সহধর্মিণী অসুস্থ মনিরা বেগম বলেন, ‘পৃথিবীতে কেউ নেই আমার। ১৫ বছর আগে তার (রতন কুমার বিশ্বাস) সঙ্গে একসঙ্গে থাকা শুরু করি। কিছুদিন বেড়িবাঁধে থেকেছি। পরে দশ বছর ধরে খেয়ে না খেয়ে মেগনিতলার ঝুপড়িতে আছি। আজ পাকাঘর পেলাম। জীবনে পাকাঘরে থাকব, তা কখনো ভাবতে পারিনি। আমরা খুব খুশি হয়েছি।’

বাগেরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ মুছাব্বেরুল ইসলাম বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে জানতে পারি, মুক্তিযোদ্ধা দাবি করা রতন কুমার বিশ্বাস নামের এক ব্যক্তি তার সহধর্মিণী নিয়ে সড়কের পাশে ঝুপড়ি ঘরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।আমি তার খোঁজখবর নেই। তাকে রনসেন গুচ্ছ গ্রামে জমিসহ একটি ঘর দেয়ার প্রস্তাব দেই। তিনি রাজি হন। সেই প্রক্রিয়া হিসেবে পাকাঘর, খাট, পোশাক, হাড়ি-পাতিল, খাবারসহ তার জন্য নির্ধারিত ঘরে উঠিয়ে দিয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘বয়স বেশি হওয়ায় শারীরিকভাবেও একটু অসুস্থ তারা দুজন। এজন্য সহজে পানির সংস্থানের জন্য তাদের ঘরের পাশে একটি ডিপ টিউবওয়েলও বসিয়ে দেয়া হচ্ছে। আশা করি, বাকি দিনগুলো এই দম্পতি শান্তিতে থাকতে পারবেন।’ রতন কুমার বিশ্বাসের মুক্তিযোদ্ধার আবেদনের বিষয়টি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।

বাগেরহাট সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সরদার নাসির উদ্দিন বলেন, ‘বাগেরহাটবাসীর যে কোনো সমস্যা আমাদের প্রিয়নেতা সংসদ সদস্য শেখ তন্ময়ের নজরে আসলেই তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেন। রতন দম্পতির অসহায়ত্বের খবর শুনে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। আমি তার নির্দেশনা অনুযায়ী রতন দম্পতির সঙ্গে দেখা করেছি, কথা বলেছি। সবশেষ সবার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে তাদের বসবাসের জন্য একটি ভালো ব্যবস্থা হয়েছে। তাদেরকে অন্যান্য সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় নিয়ে আসার প্রক্রিয়া চলছে।’

রতন কুমার বিশ্বাস ও মনিরা বেগম দুজনের বাড়ি বাগেরহাট সদর উপজেলার কালদিয়া গ্রামে। তাদের কোনো জায়গা-জমি নেই। কোনো সন্তানও নেই। দুই জন দুই ধর্মের হলেও ১৫ বছর ধরে একইসঙ্গে বসবাস করে আসছেন তারা।