ঝালকাঠির গুরুত্বপূর্ণ দুটি সড়কই যেন মরণ ফাঁদ

লেখক:
প্রকাশ: ৫ years ago

সড়ক পথে বরিশাল থেকে ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলা শহরে প্রবেশ করার অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে নলছিটি-দপদপিয়া সড়ক। দীর্ঘদিন মেরামত না করায় উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কের বেহাল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। কুমারখালি, কাঠেরপুল, শংকরপাশা, সারদল, ব্র্যাক কার্যালয়ের সামনেসহ বেশ কয়েকটি স্থানে খানাখন্দে ভরে গেছে। বর্ষার মৌসুমের শুরুতেই বৃষ্টির পানি গর্তগুলোতে জমে জনগণের ভোগান্তি বেড়েছে। বৃষ্টিতে অবস্থা এমন যে, যানবাহন চলাচল অনেকটা বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। একই অবস্থা ঝালকাঠি জেলা শহর থেকে নলছিটিতে প্রবেশের একমাত্র পথ বারইকরণ-নলছিটি সড়কটির। সাত কিলোমিটার সড়কটির দুই কিলোমিটার সম্প্রতি সংস্কার করা হলেও ঝুঁকিপূর্ণ পাঁচ কিলোমিটারে জনদুর্ভোগ রয়েই গেছে। পাঁচ কিলোমিটারে শতাধিক স্থানে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টিতে গর্তে পানি জমে কর্দমাক্ত হয়ে যায়। এতে যানবাহন চলাচলে বিঘœ ঘটছে। ঝুঁকি নিয়ে যাত্রীরা এই সড়ক দিয়ে টেম্পো, অটোরিকশা, ভাড়ার মোটরসাইকেল ও ভ্যানগাড়িতে যাতায়াত করছেন।

জানা গেছে, ব্যবসা-বানিজ্যে এক সময়ে প্রসিদ্ধ নলছিটিকে দ্বিতীয় কোলকতা বলা হতো। সুগন্ধা নদী তীরবর্তী এ শহরটির ভৌগলিক দিক থেকে বিভাগীয় শহর থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটা এবং ঝালকাঠি জেলা শহর থেকে মাত্র সাত কিলোমিটার দুরে অবস্থান করায় একসময় ব্যবসা বানিজ্যর কেন্দ্রবিন্দু ছিলো। সংস্কারের অভাবে বর্তমানে নলছিটি-দপদপিয়া ও বারইকরণ-নলছিটি সড়কটিতে খানাখন্দ সৃষ্টি হয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এতে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মালামাল আনা নেওয়া করতে বিকল্প সড়ক হিসেবে বাকেরগঞ্জ উপজেলা ঘুরে নলছিটিতে শহরে প্রবেশ করতে হয়। ফলে তাদের পরিবহন ব্যায় বাবদ গুনতে হয় দ্বিগুন টাকা।

জানাগেছে, ২০০২ জোট সরকারের সময়ে দপদপিয়া-নলছিটি-মোল্লারহাট সড়ক পিচঢালা করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। সমসাময়িক সময়ে পিচঢালা করা হয় বারইকরণ-নলছিটি সড়কটিও। ওই সময় ঠিকাদারের উদাসীনতায় নিন্মমানের কাজের ফলে তিন-চার বছর যেতে না যেতেই সড়কগুলোর পিচ-পাথর ও ইটের খোয়া উঠে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়। নির্মাণের কয়েক বছর পর গুরুত্বপূর্ণ এ সড়ক দুটি নামকাওয়াস্তে সংস্কার করা হয়। সংস্কারের অর্থ লুটপাটের কারনে কয়েক মাস যেতে না যেতেই সড়কের চিত্র যেই সেই। এদিকে ব্যস্ততম এ সড়ক দুটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় দুর্ঘটনা এড়াতে চালকরা প্রতিবছর শুকনো মৌসুমে নিজ উদ্যোগে সেচ্ছ্বাশ্রমে ইট, বালুর বস্তা ও কাঁদামাটি দিয়ে গর্ত সংস্কার করে। যা এক পসলা বৃষ্টি হলেই কাঁদামাটি ধুয়ে চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পরে। বর্ষা মৌসুমে এ সড়কে জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, দপদপিয়া থেকে নলছিটি বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত সড়কের দৈঘ্য ৯ কিলোমিটার। ব্যস্ততম এ সড়কটি এতো সরু যে, দুটি গাড়ি পাশাপাশি পাশ কাটাতে গিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনায় পড়ে। নলছিটির খাসমহল এলাকার চাল আড়তদার মুনতাকিম ট্রেডার্সের স্বত্তাধিকারী শাহাদৎ আলম বলেন, প্রতি সপ্তাহে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা চাল বোঝাই অন্তত ২০টি ট্রাক আসে। দপদপিয়া সড়ক চলাচলে অনুপযোগী হওয়ায় বাড়তি টাকা দিয়ে বিকল্প সড়ক ব্যবহার করে মালামাল বহন করতে হয়। এতে প্রতিনিয়ত স্থানীয় ব্যবসায়ীদের খেসারত দিতে হচ্ছে।

দপদপিয়া এলাকার বাসিন্দা মো. মনির হোসেন বলেন, সড়কটি সংস্কার করা হয়েছে এক বছর আগে। কিন্তু সঠিকভাবে সংস্কার না করায় কিছুদিন যে না যেতেই সড়কের বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। এ সমস্যা সমাধানে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তিনি।
নলছিটি শহরের সবুজবাগ এলাকার বাসিন্দা প্রদীপ কুমার বলেন, বারইকরণ-নলছিটি সড়ক দিয়ে প্রতিদিন ঝালকাঠি শহরের কর্মক্ষে যাতায়াত করছি। সড়কটির এমন বেহাল অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে, এখন কোন যানবাহনে চলাচল নিরাপদ নয়। খানাখন্দের কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে।
ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালক মো. ইকবাল হোসেন বলেন, বারইকরণ থেকে দুই কিলোমিটার সড়ক মেরামত করা হয়েছে, তাও বেশি ভাল কাজ হয়নি। নিন্মমানের কাজ হওয়ায় যেকোন সময় পিচ উঠে যাবে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে বাকি পাঁচ কিলোমিটার পথ। দীর্ঘ দিনেও সংস্কার না হওয়ায় বিভিন্ন স্থানে শতাধিক গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের গাড়ি চালাতে যেমন সমস্যা হচ্ছে, তেমনি যাত্রীরাও দুর্ভোগে পড়েন।
এ ব্যাপারে নলছিটি উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ হেল বাকি চৌধুরী বলেন, সড়কে খানাখন্দের বিষয়টি সংস্কারের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। দপদপিয়া-মোল্লারহাট সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু হবে শীগগিরই। বরাদ্দ আসলে অন্য সড়কগুলো সংস্কার করা হবে।