 জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারী নেতৃত্ব বৃদ্ধিতে সুপারিশমালা
                                            
                                                জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারী নেতৃত্ব বৃদ্ধিতে সুপারিশমালা                                            
                                        
“নারীর জয়ে সবার জয়” নেটওর্য়াকের আওতায় বরিশালে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি্ -এর নারী নেতৃবৃন্দরা ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল এর সহায়তায় “আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারী নেতৃত্ব বৃদ্ধিতে সুপারিশমালা” শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলন এর আয়োজন করেছে।
আজ সকাল ১১ টায় শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত হয় এ সংবাদ সম্মেলন যেখানে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারী নেতৃত্ব বৃদ্ধির লক্ষ্যে তারা তুলে ধরেন তাদের সুপারিশমালা।
যদিও বিগত এক দশকে নারীর রাজনৈতিক নেতৃত্ব বৃদ্ধিতে বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রধান তিনটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতত্বে আছেন নারী। দেশের প্রধানমন্ত্রী ও জাতীয় সংসদের স্পিকার নারী। বাংলাদেশে জাতীয় সংসদে নারীদের জন্য একটি বিস্তৃত কোটা ব্যবস্থা রয়েছে যেখানে ৫০টি আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত। এসব অর্জনের পরও রাজনৈতিক দলের সকল পর্যায়ের নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে নারীদের তেমন অংশগ্রহণ নেই। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ২০০৯ (সংশোধিত) অনুযায়ী ২০২০ সালের মধ্যেই মূলদলের সকল পর্যায়ের কমিটিগুলোতে বাধ্যতামূলকভাবে ৩৩% নারী অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু, জাতীয় পর্যায়ের কমিটিতে নারী অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি থাকলেও ইউনিয়ন থেকে জেলা পর্যায় পর্যন্ত দলের নেতৃস্থানীয় পদগুলোতে নারীর অংশগ্রহণ খুবই নগন্য। গত ২০০৮ সালে নির্বাচনে সাধারণ আসনে নির্বাচিত নারী প্রার্থীর সংখ্যা ছিল ১৯জন এবং বর্তমান পার্লামেন্টে সেটার সংখ্যা দাড়িয়েছে ২২ জনে। গত সংসদ থেকে বর্তমান সংসদে সাধারণ আসনে নারী প্রতিনিধি বৃদ্ধি পেয়েছে মাত্র ৩ জন।
ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল“নারীর জয়ে সবার জয়” ক্যাম্পেইন এর মাধ্যমে নারীর রাজনৈতিক নেতৃত্ব বিকাশের লক্ষ্যে সারাদেশে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ক্যাম্পেইনটি ইউকেএআইডি এবং ইউএসএআইডি এর অর্থায়নে এসপিএল কার্যক্রমের আওতায় পরিচালিত হচ্ছে। এই ক্যাম্পেইনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রায় ২০,০০০ এরও বেশি নারী নেতৃবৃন্দ সম্পৃক্ত রয়েছেন। সারাদেশে ৪৩০টি জাতীয় এবং তৃণমূল কমিটিতে প্রায় ৫৪৪৯জন নারীকে অন্তর্ভুক্ত হতে সহায়তা করেছে। পাশাপাশি বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নারীদের রাজনৈতিক দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করছে।
“নারীর জয় সবার জয়” ক্যাম্পেইন সারাদেশে নারীদের রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বাধাসমূহ চিহ্নিত করা এবং বাধাসমূহ উত্তরণের জন্যে সুপারিশমালা তৈরিতে সহায়তা করেছে। নারীরা এখনো যেসমস্ত বাধার সম্মুখীন হচ্ছে তার মধ্যে রয়েছে সহকর্মীদের পিতৃতান্ত্রিক মানসিকতা; দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে নারীদের সীমিত অংশগ্রহণ; বৈষম্যমূলক নীতি এবং আইন; দলের অভ্যন্তরে এবং নির্বাচন কমিশন কতৃক আরপিও ৯০ এর বি ধারা বাস্তবায়নে যথাযথ তদারকির অভাব; নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নে দুর্নীতি, কালো টাকার দৌরাত্ম, পেশী শক্তির ব্যবহার; নারীর অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল অবস্থান; দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে না থাকা; নেতৃত্বের দক্ষতা বৃদ্ধিতে সমান সুযোগের অভাব অন্যতম। এসকল বাধা দূরীকরণে সম্মেলনে নারী নেত্রীদের তুলে ধরা সুপারিশমালা নিম্নরুপ:
* গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ২০০৯ (সংশোধিত) ধারা ৯০বি বাস্তবায়নে নির্বাচন কমিশন এবং রাজনৈতিক দল কর্তৃক মনিটরিং সেল গঠন করা। এই সেল রাজনৈতিক দলের মূলধারার কমিটিতে নারীর অংশগ্রহণ প্রত্যাশিত হারে বাড়ছে কি না তা নিয়মিতভাবে মনিটর করবে।
* তৃণমূল পর্যায়ে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ২০০৯ এর ধারা ৯০বি বাস্তবায়নের অগ্রগতির উপর রাজনৈতিক দলগুলো থেকে নির্বাচন কমিশনে বাৎসরিক প্রতিবেদন পেশ করার বাধ্যবাধকতা থাকা।
* নির্বাচনে সন্ত্রাস, কালো টাকা এবং পেশীশক্তির অপব্যবহার রোধ করতে নির্বাচন কমিশন কতৃক তদারকির ব্যবস্থা করা। প্রয়োজনে এলাকাভিত্তিক পর্যবেক্ষণ ক্যাম্প স্থাপন করে প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
* নির্বাচনী বাজেট এর বাইরে কোনও প্রার্থী অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করছে কিনা তা নির্বাচন কমিশন কতৃক মনিটর করা। আইন ভঙ্গকারীর বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
* নারী প্রার্থীদের জন্যে নির্বাচনে জামানতের টাকার পরিমাণ কমাতে হবে।
* নির্বাচনী ব্যয়ের সীমা কমাতে হবে।
* নারীবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করা। নারী প্রার্থীদের জন্যে নির্বাচনকালীন নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
* রাজনৈতিক দলের সকল স্তরে প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রে স্বচ্ছ ও সমন্বিত ব্যবস্থা পদ্ধতি নিশ্চিত করা এবং সাধারণ আসনে নারীদের মনোনয়নের জন্য বিশেষ পদ্ধতির ব্যবস্থা করা। নারী প্রার্থীদের সার্বিক সহযোগিতা করা এবং নির্বাচনী প্রচারণার সময়ে সমর্থনের জন্য কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা প্রদান করা।
* নির্বাচনী ক্যাম্পেইন ব্যবস্থাপনাসহ দলের বিভিন্ন কার্যক্রমে নারীদেরকে নেতৃত্ব প্রদানের জন্য সুযোগ প্রদান। সম্পাদকীয় পদসহ সকল নেতৃত্বস্থানীয় পদের বিস্তারিত দায়িত্ব নির্দিষ্ট করা এবং তা দলের গঠনতন্ত্রে উল্লেখ থাকতে হবে। নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের সকল কমিটিগুলোতে নারীদের সম্পৃক্ততা বাড়ানো।
* রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচন সংক্রান্ত মনোনয়ন কমিটিতে ৩৩% নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা এবং নির্বাচনে সাধারণ আসনে ৩৩% নারী মনোনয়ন প্রদান করা।
* নারীদের রাজনৈতিক দক্ষতা বৃদ্ধির জন্যে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা।
* রাজনৈতিক দলগুলোতে নারী রাজনৈতিক অংশগ্রহণ বৃদ্ধিতে উদ্বুদ্ধ করতে সরকার বিভিন্ন প্রণোদনার ব্যবস্থা করতে পারে যেমন অর্থ অথবা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে পারে। আবার আইনের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলসমূহকে উদ্বুদ্ধ করতে যে দল নির্বাচনে নির্দিষ্ট সংখ্যক নারী প্রার্থী মনোনয়ন দিবে তাদেরকে নির্দিষ্ট পরিমান অর্থ প্রণোদনা হিসেবে প্রদান করা হবে।
সম্মেলনে এ সকল সুপারিশমালা পাঠ করেন বাংলাদেশ আওমী লীগ এর জেলা কমিটির সদস্য ইসরাত জাহান সোনালী এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের মহানগর কমিটির মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা আয়শা তৌহিদ লুনা। সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন নুরুন্নাহার পুষ্প, ৩ নং ওর্য়াড সম্পাদিকা , বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগ; ফাতেমা তুজ জোহরা মিতু, যুগ্ম সম্পাদক, বিএনপি মহিলা দল; শ্যামলী সাহা, সহ-সভাপতি, জেলা কমিটি, বাংলদেশ মহিলা আওয়ামী লীগ; হোসনেয়ারা আক্তার, সভাপতি, ইউনিয়ন কমিটি, মহিলা দল, বিএনপি; সেলিনা বাদল, সহ-সভানেত্রী, মহানগর কমিটি, বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগ; আফরোজা আলম, আহ্বায়ক, জেলা কমিটি, বিএনপি মহিলা দল; নাজনীন আক্তার, সভাপতি, ২৬ নং ওয়ার্ড, মহানগর কমিটি, বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগ; নাজমা আক্তার মুন্নী, ২৪ নং ওয়ার্ড সেক্রেটারী, মহানগর কমিটি, মহিলা দল, বিএনপি; রুশিয়া বেগম, সদস্য, জেলা কমিটি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ; আসমা আক্তার, সদস্য, জেলা কমিটি, বাংলদেশ মহিলা আওয়ামী লীগ; মোসাম্মত ফাতেমা বেগম, সদস্য, জেলা কমিটি, বাংলদেশ মহিলা আওয়ামী লীগ; ফেরদৌস জাহান মুন্নী, সভাপতি, মহানগর কমিটি, বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগ; ডালিয়া নাসরিন, সদস্য, জেলা কমিটি, বাংলদেশ আওয়ামী লীগ; মারিয়া ইসলাম মুন্নী, সাধারণ সম্পাদক, ১৬ নং ওয়ার্ড, মহানগর কমিটি, মহিলা দল, বিএনপি; মমতাজ বেগম, সভানেত্রী, মহানগর কমিটি, মহিলা দল, বিএনপি ।
সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল –এর রিজিওনাল কো-অর্ডিনেটর দিপু হাফিজুর রহমান সহ অন্যান্য। এ সময় নারী নেত্রীরা সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।