জঙ্গি-সন্ত্রাসীসহ অপরাধীদের ধরতে আধুনিক ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করছে পুলিশ। বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স, সিআইডি, ডিএমপি ও পিবিআই। পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে ল’ফুল ইন্টারসেপশন সেল (এলআইসি) গঠন করা হয়েছে। এই সেল মোবাইল ট্র্যাকিং করে অপরাধ ও অপরাধীদের সনাক্তকরণে কাজ করে যাচ্ছে। সিআইডি ঢাকায় একটি অত্যাধুনিক ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব এবং আইটি ফরেনসিক শাখা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ওই ল্যাবে আন্তর্জাতিক মানের আইটি ফরেনসিক সফটওয়্যার ব্যবহার করে ডিজিটাল আলামত পরীক্ষা করা হয়। আজ সোমবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে এ তথ্য জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে এ সংক্রান্ত প্রশ্ন উত্থাপন করেন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ডা. রুস্তম আলী ফরাজী। জবাবে মন্ত্রী আরো জানান, ক্রাইম ডাটা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (সিডিএমএস) সফটওয়্যার ব্যবহার করে অপরাধীদের অপরাধ সংক্রান্ত তথ্য সংরক্ষণ করা হচ্ছে। যার ফলে কোনো থানায় অপরাধী ধরা পড়লে সে সংক্রান্তে অন্য কোনো থানা খুব সহজেই জানতে পারে। এ ছাড়াও কোনো অপরাধী জামিনে মুক্ত হয়ে নতুন কোনো অপরাধে যুক্ত হচ্ছে কি না তা সহজে বুঝতে পারা যায়।
তিনি বলেন, এ সকল চিহ্নিত জটিল সমস্যা সমাধানকল্পে বায়োমেট্রিক তথ্যসহ অপরাধীর ডাটাবেইজ তৈরি করা হয়েছে, যা এসআইভিএস (সাসপেক্ট আইডেনটিফিকেশন এন্ড ভেরিফিকেশন সিস্টেম) ডাটাবেইজ নামে পরিচিত। এই সিস্টেমে অপরাধীকে খুব সহজেই সনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে। বর্তমানে এ প্রযুক্তি ডিএমপিতে ব্যবহার করা হচ্ছে।
মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে ক্রাইমসিন ম্যানেজমেন্ট ও ডিজিটাল ডর্কেটিং ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। বর্তমানে অপরাধ ও অপরাধীদের সনাক্তকরণে থানাসমূহ সিআইডি, ডিএমপি ও পিবিআই এর সহায়তা নিয়ে থাকে।
মাদকের ভয়াবহ আগ্রাসন নিয়ে একাধিক প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল এর বিরুদ্ধে সামজিক আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আমাদের দেশ মাদক তৈরি না করলেও এর সর্বনাশী ছোবলের শিকার হচ্ছে। মাদক নিয়ন্ত্রণ করা আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যুব সমাজ খুব সহজেই হাতের কাছে মাদক দ্রব্য পেয়ে যাচ্ছে। আমরা কঠোর থেকে কঠোরতর ব্যবস্থা নিচ্ছি। পুলিশ-র্যাব-বিজিবিসহ সকল আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী সতর্ক অবস্থায় আছে। তারপরেও মাদক আসছে। এতো ছোট জিনিসি যে এটা দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ে। মাদক চক্রের হাতে রয়ে গেছে।
তিনি আরো বলেন, এমপি, জনপ্রতিনিধি, সুশিল সমাজ, এনজিও, ইমাম সবাইকে বলেছি। এর বিরুদ্ধে দাড়াতে। আমরা সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা ও প্রশাসনিক কঠোরতা অব্যাহত রাখার মাধ্যমে মাদক নির্মূল করব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের যে জিরো টলারেন্স সেটা আমরা অব্যাহত রেখে সফল হবো।
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রহিম উল্লাহ’র প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, আগ্নেয়াস্ত্রের নীতিমালা ২০১৬ অনুযায়ী শর্ত সাপেক্ষে ৩০ থেকে ৭০ বছর বয়স পর্যন্ত শারিরীক ও মানসিকভাবে সক্ষম বাংলাদেশের সকল নাগরিকদের আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়। কাজেই বিদ্যমান নীতিমালা অনুযায়ী কতিপয় শর্ত পালন সাপেক্ষে সংসদ সদস্যদের স্ত্রীদের আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স পেতে কোনো বাধা নেই।
ওয়ার্কার্স পার্টির সংসদ সদস্য হাজেরা খাতুনের প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, জনসংখ্যার অনুপাতে পুলিশের জনবল যথেষ্ট নয়। জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও পুলিশ বাহিনীকে আধুনিকায়ন করার লক্ষ্যে বর্তমান সরকারের পূর্ববর্তী মেয়াদে বিভিন্ন পদবির ৩৩ হাজার ১০২টি এবং চলতি মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী অনুমোদিত ৫০ হাজার পদ সৃজনের অংশ হিসেবে ৪৫ হাজার ৪৩৪টি নতুন পদ সৃষ্টি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, পুলিশ ও জনসংখ্যার অনুপাত ক্রমন্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে। ভবিষ্যতে এ অনুপাত আরও কমিয়ে আনার লক্ষ্যে পুলিশের জনবল বৃদ্ধিও বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।