গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর জন্ম চট্টগ্রামের এক বনেদি পরিবারে। তিনি চাইলেই বিলাসবহুল জীবনযাপন করতে পারতেন। তারপরও কেন এত সহজ-সরল জীবনযাপন করেন? এমনকি তিনি যে প্যান্ট পরেন, সেটিও সেলাই করা!
এমন এক প্রশ্নের জবাবে হাসিমুখে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘পুরা প্যান্ট ছিঁড়ে নাই, আমি কী করব? আমি এই প্যান্টটা ফেলে দেব? যে দেশের মানুষ খালি পায়ে চলত। আমি তো ১৯৭১ সালে দেখেছি। আমার শার্টের বয়স প্রায় ৩০ বছর। এখন এই শার্ট যদি না ছেঁড়ে, আমি কী ছিঁড়ে ফেলব?’
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে এমন তথ্যই জানিয়েছেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। সেই সাক্ষাৎকারের ভিডিওটি সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
ওই সাংবাদিক জানতে চান, আপনি বিলাসবহুল গাড়িতে চড়তে পারেন। বিএমডব্লিউতে চড়া আপনার পক্ষে সম্ভব। কিন্তু আপনি ছোটখাটো একটা ভাঙাচোড়া গাড়িতে চড়েন। কেন?
জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘আমি তো সব রকমের লাক্সারি (বিলাসবহুল জীবনযাপন) করেছি। আমি যখন বিলেতে ছিলাম, তখন আমার প্রাইভেট প্লেন চালানোর লাইসেন্স ছিল। প্রিন্স চার্লসের স্যুট বানাতেন যে দর্জি, সেই দর্জি আমার স্যুটও বানাতেন। আমি কখনো বানানো স্যুট পরি নাই। দর্জি এসেছে, আমার মাপজোক নিয়ে গেছে। এখন আমি দেখি, এটা একটা ছেলেমানুষি ছিল। এটা টাকার অপচয়। সেই টাকা দিয়ে আমি কতজনের উপকার করতে পারতাম।’
মুক্তিযুদ্ধের সময় ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী যখন দেশে আসেন, তখনকার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার টাকা-পয়সা, ট্রাভেলার চেক আছে। আমার ক্যাশ টাকার দরকার ছিল না। ক্রেডিট কার্ড ছিল। তখনকার দিনে ক্রেডিট কার্ডের কথা কে চিন্তা করত।’
কখনো হতাশ হন কিনা জানতে চাইলে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘আমি একসময় ঠিক করলাম, আর পারছি না। ফাইট করে চলে যাব। আমার গাড়িও ফেলে এসেছি। আমার গাড়ির দাম মার্সিডিজের চেয়েও বেশি ছিল। আমার ওই গাড়ির একটা চাকা পাংচার হয়ে গেলে চাকা বদলাতে হতো না। তখন রিকশাওয়ালারা কয়, কী করেন/ আমি বললাম, ডাক্তার। তিনি বললেন, কই যাবেন? আমি বললাম, এখন ভাবছি চইলা যামু। তিনি বললেন, আপনারা তো যাইবেন, আমরা তো যাইতে পারব না। এই দেশে তো আমাদের থাকতে হবে। আমার কী হবে? তখন আমার মনে হলো তাইতো।’ তারপর থেকে দেশেই রয়ে গেলেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী।