#

বাংলাদেশের ধর্মীয় তীর্থস্থান ভ্রমণে এসে চুরির কবলে পড়া ভারতের চার নাগরিকের মালামাল উদ্ধার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) তাদের মৌখিক বিবরণের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে ভারতীয় সাত হাজার রুপি, বাংলাদেশি সাড়ে তিন হাজার টাকা, চারজনের পাসপোর্ট, সবার ভারতীয় আধার কার্ড, প্যানকার্ড, ভোটার কার্ড ও কলকাতাগামী ‘মৈত্রী এক্সপ্রেস’ ট্রেনের চারটি টিকিট উদ্ধার করা হয়েছে।

ওয়ারী থানার পরিদর্শক (অপারেশনস) সুজিত কুমার সাহা জাগো নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সুজিত নিজে চুরি হওয়া এসব মালামাল উদ্ধারে অভিযানের নেতৃত্ব দেন।

তিনি বলেন, মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে ভারতীয় চার প্রবীণ নাগরিক ওয়ারী থানায় এসে জানান, সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ওয়ারী থানার অভয়দাস লেন এলাকায় সবকিছু খোয়া যায় তাদের।

‘তাদের কাছে ঘটনার বিস্তারিত জানতে চাইলে জানান, তারা ৪ জন (দুই নারী ও দুই পুরুষ) গত ৫ ফেব্রুয়ারি মাঘী পূর্ণিমার উৎসব উপলক্ষে মাদারীপুরের বাজিতপুর প্রণব মঠে আসেন। মঙ্গলবার বিভিন্ন মন্দির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখার জন্য তারা মাদারীপুর থেকে বাসযোগে ঢাকায় আসেন। সায়েদাবাদ নেমে ভারতে ফেরার ট্রেনের টিকিট কাটার জন্য প্রথমে তারা কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে যান। এরপর কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারির মৈত্রী এক্সপ্রেসের চারটি টিকিট কেটে সকাল পৌনে ১১টার দিকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে স্বামীবাগ লোকনাথ ব্রহ্মচারীর মন্দিরের উদ্দেশে রওনা হন।’

সুজিত কুমার বলেন, তারা হালকা নাস্তা করবেন বলে ভাড়াকৃত সিএনজিচালককে একটি খাবারের দোকানের সামনে থামানোর জন্য অনুরোধ করেন। সে অনুযায়ী বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ওয়ারী থানার অভয়দাস লেনের একটি খাবারের দোকানের সামনে অটোরিকশা থামান চালক। চার পর্যটকের সবাই অটোরিকশা থেকে নামেন এবং চালককেও তাদের সঙ্গে নাস্তা করতে যাওয়ার অনুরোধ করেন। সিএনজিচালক যাত্রীদের সঙ্গে না গিয়ে তাদের নাস্তা করে আসতে বলেন। যাত্রীরা নাস্তা খেয়ে বাইরে এসে আর অটোরিকশা ও চালক খুঁজে পাননি। আশপাশে খোঁজাখুজি করে বুঝতে পারেন, অটোরিকশাচালক যাবতীয় মালামাল নিয়ে পালিয়েছেন।

ভারতীয় ওই তীর্থযাত্রীরা থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ না দিলেও তাদের চুরি যাওয়া মালামালের বিস্তারিত নোট করে পুলিশ। এগুলোর মধ্যে ছিল দু’টি ট্রলি ব্যাগ, চারটি কাঁধের ব্যাগ ও নারীদের দুইটি ভ্যানিটি ব্যাগ এবং তাতে যাবতীয় সামগ্রী।

তাদের বর্ণনা শুনে নিজেই তদন্ত শুরু করেন পরিদর্শক সুজিত। তাৎক্ষণিক মৃত্যুঞ্জয় নামে এক সার্জেন্টের মাধ্যমে সিএনজির মালিকানা সংক্রান্ত কিছু তথ্য সংগ্রহ করেন তিনি। এরমধ্যে ওয়ারলেসে ডিএমপির সব থানায় মেসেজটি পাঠিয়ে এ ধরনের কোনো অটোরিকশা পেলে আটক করে ওয়ারী থানাকে জানানোর অনুরোধ করেন সুজিত।

এ পরিদর্শক বলেন, সিএনজিটি সম্পর্কে কিছু তথ্য নিয়ে রেজিস্টার্ড একটি ফোন নম্বরে কল দিয়ে সেটি বন্ধ পাই। আরেকটি ফোন নম্বর জোগাড় করে যোগাযোগ করে জানা যায়, অটোরিকশাটি ঠেঙ্গামারা সমাজকল্যাণ সংস্থা থেকে ঋণে কেনা। এরপর অটোরিকশার মালিকের বিষয়ে তথ্য পাই এবং তিনি জানান, অটোরিকশাটি হাবিব হাওলাদার নামে একজন চালাচ্ছিলেন। বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে যাত্রাবাড়ী থানা থেকে একটি টিম ওই মালিকের কাছে পাঠানোর অনুরোধ করি। যাত্রাবাড়ী থানার টিম তাৎক্ষণিক অটোরিকশার মালিকের কাছে পৌঁছে বেশ কিছু তথ্য সংগ্রহ করে জানান।

‘এরপর ওয়ারী বিভাগের উপ-কমিশনারের (ডিসির) সঙ্গে আলোচনা করে ওয়ারী ও যাত্রাবাড়ী থানার দু’টি টিম যৌথভাবে ‘ঢাকা মেট্রো থ-১৪-৬৮৯০’ এর চালকের নাম-ঠিকানা শনাক্ত করে অভিযান চালায়। অবশেষে ধোলাইপাড়ে ওই অটোরিকশাচালকের বাসা থেকে সব মালামাল উদ্ধার করা হয়।’

পরিদর্শক সুজিত কুমার বলেন, ৮ ঘণ্টার এই অভিযানে চুরি যাওয়া মালামালগুলো উদ্ধার করা সম্ভব হলেও চালক হাবিব হাওলাদার আগেই বাড়ি থেকে পালিয়ে যান। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

চুরি যাওয়া মালামাল ফিরে পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন ভারতীয় এ প্রবীণ তীর্থযাত্রীরা। তারা সফল অভিযানের জন্য বাংলাদেশ পুলিশের ভূয়সী প্রশংসা করেন বলে জানান সুজিত।

উত্তর দিন

Please enter your comment!
এখানে আপনার নাম লিখুন