সরকারি চাকরিতে নিয়োগে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থীই ধাওয়া খেয়ে চশমা, মোবাইল ফোন, মানিব্যাগসহ বিভিন্ন জরুরি জিনিসপত্র হারিয়েছেন।
এর মধ্যে শিক্ষার্থীরা যে যেখানে খোয়া যাওয়া জিনিস দেখতে পেয়েছেন, তা সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন। পরিচিতজনদের মাধ্যমে খোয়া যাওয়া জিনিস ফেরত দিতে না পেরে তারা শরণাপন্ন হচ্ছেন আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়া শিক্ষার্থীদের।
এর মধ্যে কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্লাটফর্ম সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন সামাজিকমাধ্যম ফেসবুকে চারটি চশমার ছবি পোস্ট করে এসব ফিরিয়ে নিতে আহ্বান জানিয়েছেন।
হাসাল আল মামুন ‘কোটা সংস্কার চাই (সব ধরনের চাকরির জন্য)’ গ্রুপে প্রকাশিত পোস্টে বলেছেন- ‘ফজলুল হক মুসলিম হলের এক ভাই চশমাগুলো দিয়ে গেছেন, ছবি দেখে চিনে আমার কাছ থেকে নিয়ে যাবেন, ধন্যবাদ ভাই।’
এ বিষয়ে জানতে রোববার সকালে যোগাযোগ করলে হাসান আল মামুন চারটি চশমা পাওয়ার খবর নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, গত ৮ ফেব্রুয়ারি কোটা সংস্কারে চূড়ান্ত আন্দোলন শুরু হওয়ার পর থেকে এভাবেই খোয়া যাওয়া জিনিসপত্র তারা সংশ্লিষ্টদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন।
৮ ফেব্রুয়ারি রাতে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালানোর সময় ধাওয়ার মুখে এক পুলিশ সদস্য তার মোটরসাইকেল রেখেই চলে আসেন। তখন টিয়ারশেল উপেক্ষা করে নিজেই শাহবাগ থানায় মোটরসাইকেলটি পৌঁছে দেন বলে জানান হাসান আল মামুন।
এ ছাড়া শিক্ষার্থীরা একটি মোবাইল ফোন কুড়িয়ে পেয়ে তা সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের এ আহ্বায়কের কাছে দিয়ে যান। তখন তিনি যোগাযোগ করে মোবাইল ফোনটি এর মালিককে বুঝিয়ে দেন।
মামুন জানান, ওই মোবাইল ফোনটি ছিল একটি জাতীয় দৈনিকের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধির।
খবর নিয়ে জানা গেছে, আন্দোলন কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের নিত্য ব্যবহৃত জিনিসপত্র সবচেয়ে বেশি খুইয়েছে ৮ ফেব্রুয়ারি রাত থেকে পর দিন সকাল পর্যন্ত।
শিক্ষার্থীরা জানান, ৮ ফেব্রুয়ারি দুপুরে তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে থেকে শাহবাগ পর্যন্ত গণপদযাত্রা কর্মসূচি পালন করেন।
শাহবাগে যাওয়ার পর বিকাল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত তারা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। একপর্যায়ে রাত ৮টার দিকে শিক্ষার্থীদের সড়ক থেকে সরাতে লাঠিপেটা ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে পুলিশ।
ওই সময় ছত্রভঙ্গ হয়ে যাওয়া শিক্ষার্থীরা চারুকলা ইনস্টিটিউট, বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ ও টিএসসিতে আশ্রয় নেন। এ সময় অনেকেই চশমা, মোবাইল ফোন, মানিব্যাগ, চাবির রিং ও জুতা-স্যান্ডেল হারিয়ে ফেলেন।
শিক্ষার্থীরা জানান, রাত ১০টায় টিএসসির রাজু ভাস্কর্যে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের পাশাপাশি ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরাও চড়াও হন। এ নিয়ে ক্যাম্পাসজুড়ে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়।
আন্দোলন চলাকালে মধ্যরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে ভাঙচুর চালায় অজ্ঞাত মুখোশধারীরা। পরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগের রাতভর সংঘর্ষ হয়।
ছাত্রদের আক্রান্ত হওয়ার খবর শুনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত পাঁচ ছাত্রী হল থেকে ছাত্রীরা গভীর রাতে মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসে বেরিয়ে আসেন। পরে রাত পৌনে ৩টায় ছাত্রছাত্রীরা টিএসসিতে অবস্থান নিলে সেখানে তাদের ওপর পুলিশ-ছাত্রলীগ হামলা করে বলে জানান শিক্ষার্থীরা।
ওই সময় ছাত্ররা পুষ্টি বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও শহীদুল্লাহ হলে আশ্রয় নেন। ছাত্রীরা টিএসসির ভেতরে অবস্থান করেন। রাতভর অবস্থান শেষে ভোরে নিরাপত্তা নিশ্চিত হলে ছাত্রীরা হলে ফিরে যান।
এর পর উপাচার্যের বাসভবন থেকে বের হওয়া ছাত্রলীগের একটি মিছিল থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৬টায় শহীদুল্লাহ হলে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে।
ওই সময় আন্দোলনকারী ও সাধারণ ছাত্ররা একযোগে ধাওয়া দিয়ে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের দোয়েল চত্বর পর্যন্ত নিয়ে যায়। সেখানে অবস্থানের একপর্যায়ে পুলিশ লাঠিপেটা ও কাঁদান গ্যাস নিক্ষেপ করে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এর পর শিক্ষার্থীরা হলে ফিরে যায়।
শিক্ষার্থীরা জানান, রাত থেকে সকাল পর্যন্ত পুলিশ ও ছাত্রলীগের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষকালে তারা সঙ্গে থাকা জিনিসপত্র খুইয়েছেন। পরে কেউ কেউ হারানো জিনিস ফেরত পেয়েছেন, কেউ আবার পাননি।
আবার অনেকে কুড়িয়ে পাওয়া জিনিসপত্রের মালিকের সন্ধান করেও পাননি। এ অবস্থায় তারা সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ ও আন্দোলনকারীদের ফেসবুক গ্রুপে যোগাযোগ করছেন।
উল্লেখ্য, গত বুধবার জাতীয় সংসদের অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের ঘোষণা দেন।
এর মধ্য দিয়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে গত ফেব্রুয়ারি থেকে গড়ে ওঠা আন্দোলন সফল পরিণতি লাভ করে।
বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারীরা প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে আন্দোলন স্থগিত ঘোষণা করে। এরপর তারা আনন্দ মিছিল বের করেন।