ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’র প্রভাবে ঝালকাঠির সুগন্ধা-বিষখালী নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। কাঠালিয়ার বেড়িবাঁধ ভেঙে নদীর পানি ঢুকে এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। জেলার নিম্নাঞ্চলে ইতোমধ্যে পানি ঢুকে পড়েছে।
মঙ্গলবার (২৫ মে) বিকেলে কাঠালিয়া উপজেলা পরিষদ এবং কাঠালিয়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এলাকার বিষখালী তীরের বাঁধের একটা অংশ ভেঙে নদীর পানি ঢুকে বাড়ির আঙিনাসহ তলিয়ে গেছে ফসলের মাঠ। এতে আতঙ্কে রয়েছেন ভাঙন কবলিত এলাকার বাসিন্দারা।
বিশেষ করে কাঠালিয়া সদর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র, বড় কাঠালিয়া, পূর্ব কচুয়া, লতাবুনিয়া, রঘুয়ার দড়ির চর, সোনার বাংলা, আওরাবুনিয়া, জাঙ্গালিয়া, ছিটকী ও আমুয়া, ঝালকাঠি শহরের কৃষ্ণকাঠি, নতুন কলাবাগান, পৌরসভা খোয়াঘাট এলাকা, রাজাপুরের বাদুরতলা লঞ্চঘাট, নাপিতের হাট, চল্লিশ কাহনিয়া এলাকাসহ সুগন্ধা-বিষখালী নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের প্রায় ৪৫টির অধিক গ্রামে পানি ঢুকেছে। এর মধ্যে বেশি নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। সকাল থেকেই থেমে থেমে গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। বাতাস বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বিষখালী নদী পাড়ের বাসিন্দা আ. রব খান জানান, ঝড়-বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসলে আমরা খুবই আতঙ্কে থাকি। বিশেষ করে রাতে ছেলে-মেয়েদের নিয়ে বসে থাকি। কখন বাড়ি-ঘর ভেঙে নদীতে চলে যায়। আজ দুপুরে হঠাৎ করে নদীর বাঁধ ভেঙে যেভাবে পানি উঠছে, এতে খুবই বিপদের মধ্যে রয়েছি।
কলেজছাত্র মো. জহিরুল লিমন জানান, বহু বছর ধরে লঞ্চঘাট এলাকা ভেঙে নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। গত বছর লঞ্চঘাটের ৩০০ মিটার এলাকায় বালুর বস্তা (জিও ব্যাগ) ফেলা হয়েছে। কিন্তু আমাদের উত্তর সাইডে কিছুই ফেলা হয়নি। পানি চাপে প্রতিদিন নদী ভাঙছে। আজ বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে আমাদের এলাকা তলিয়ে যাচ্ছে। রাতে পানি আরও বাড়বে। আমারা সবাই আতঙ্কে আছি। তাই দ্রুত এ বাঁধটি মেরামত করার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানাই।
কাঠালিয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আবদুর রহমান জানান, সকাল থেকে আমি বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে খোঁজখবর নিয়েছি। কোথাও কোনো সমস্যা নেই। তবে উপজেলা পরিষদের পিছনে বিষখালী নদীর তীরে বাঁধের কিছু অংশ ভেঙেছে। কিন্তু তেমন ক্ষতির আশঙ্কা নেই। ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ মোকাবিলায় উপজেলায় একটি কন্ট্রোল রুম, ছয়টি মেডিকেল টিমসহ প্রতিটি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে ৬৩টি কমিটির সদস্যরা প্রস্তুত রয়েছে।
কাঠালিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুফল চন্দ্র গোলদার জানান, ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ মোকাবিলায় মঙ্গলবার বিকেলে উপজেলা পরিষদে জরুরি সভা আহ্বান করা হয়েছে।
ঝালকাঠি জেলায় সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ মোকাবিলায় জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে চারটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। ৫৯টি সাইক্লোন শেল্টার খুলে দেয়া হয়েছে এবং ৪৯১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্রে রূপ দেয়া হয়েছে। ৩৭টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা, তৃণমূল পর্যায়ে মাইকিং করা, স্বেচ্ছাসেবক টিম গঠন করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জোহর আলীর সভাপতিত্বে ঝালকাঠি জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির ভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলা-উপজেলা কর্মকর্তা এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির বেসরকারি সদস্যরা ভার্চুয়ালি সভায় অংশ নেন।