খালেদা জিয়ার আপিল ৪-১ ভোটে নামঞ্জুর

লেখক:
প্রকাশ: ৬ years ago

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আপিল আবেদন নামঞ্জুর করেছে নির্বাচন কমিশন। এর ফলে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাঁর আর অংশ নেওয়া হচ্ছে না।

আজ শনিবার সন্ধ্যায় নির্বাচন ভবনে খালেদা জিয়ার আবেদনের শুনানি শেষে নির্বাচন কমিশন এই সিদ্ধান্তের কথা জানায়। খালেদার প্রার্থিতা ফিরিয়ে দেওয়ার পক্ষে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার ভোট দেন। অন্যদিকে প্রার্থিতা বাতিলের পক্ষে রায় দেন প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ (সিইসি) অপর চার কমিশনার।

পরে নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ জানান, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আপিল আবেদনটি ৪-১ ভোটে নামঞ্জুর করা হয়েছে।

এর আগে দুপুরে খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র বাতিলের বিরুদ্ধে আপিল আবেদনের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি করেছেন আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী, জয়নুল আবেদীন ও মাহবুব উদ্দিন খোকনসহ আরও কয়েকজন আইনজীবী।

খালেদা জিয়া ফেনী-১, বগুড়া-৬ ও বগুড়া-৭ আসনে নির্বাচন করার জন্য মনোনয়নপত্র জমা দেন। কিন্তু তিন আসনের রিটার্নিং কর্মকর্তা খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র বাতিল করে দেন। এর বিরুদ্ধে তাঁর পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনে আপিল করা হয়।

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের দাবি, রিটার্নিং কর্মকর্তারা তাঁদের নেত্রীর মনোনয়নপত্র বাতিল করেছেন নির্বাচনী অপরাধের অভিযোগে। কিন্তু, বিএনপির চেয়ারপারসনের সাজা হয়েছে দুর্নীতি মামলায়, নির্বাচনী অপরাধে নয়।

খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের অনেকেই বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা।

নির্বাচন কমিশনে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্রের বৈধতা নিয়ে আপিল শুনানি চলাকালে আইনজীবীরা প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য কমিশনারদের কাছে জানতে চান, খালেদা জিয়া কারাগারে, তিনি কীভাবে আচরণবিধি লঙ্ঘন করলেন বা নির্বাচনী অপরাধ করলেন? আর এই কারণে কীভাবে খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়?

নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বে প্রার্থীদের আপিল নিষ্পত্তি করা হয়। আজ শেষ দিনের মতো আপিল নিষ্পত্তির কাজ চলছে।

সিদ্ধান্ত জানানোর সময় নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার যখন খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্রের বৈধতার প্রশ্নে আপিল গ্রহণ করেন তখন খালেদা জিয়ার পক্ষের আইনজীবীরা উল্লাস প্রকাশ করেন। এরপর সিইসিসহ চার কমিশনার আপিল নাকচ করার পক্ষে রায় দিলে সরকার পক্ষের আইনজীবীরা উল্লাস প্রকাশ করেন।

এর পরপরই সচিব বলেন, খালেদা জিয়ার আপিল গৃহীত হয়নি। ফলে বিএনপির চেয়ারপারসন ভোটে অংশ নিতে পারছেন না।

শুনানিতে খালেদার আইনজীবীরা যে যুক্তি দিয়েছেন

শুনানিতে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা বলেন, ‘আমাদের আইনগত ভিত্তি হচ্ছে, রিটার্নিং কর্মকর্তা তাঁর মনোনয়নপত্র বাতিলের আদেশে যা বলেছেন তা হলো, নির্বাচনসংক্রান্ত বিষয়ে যদি কেউ অপরাধ করেন, যেমন- মনোনয়নপত্র দাখিলের পর কেউ প্রচারণা শুরু করল বা কাউকে মারধর করল বা ভোটকেন্দ্রে কোনো বাধা সৃষ্টি করল। অর্থাৎ, নির্বাচনের আচরণবিধি লঙ্ঘন করল। তাঁরা বলেন, খালেদা জিয়ার সাজার কোনো প্রসঙ্গে কথা বলা হয়নি। এখানে বলা হয়েছে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়। খালেদা জিয়া বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। সেখানে থেকে তিনি কীভাবে নির্বাচনী আইন লঙ্ঘন করবেন?

আইনজীবীরা বলেন, তাঁরা বিষয়টি কমিশনের সামনে এনেছেন। আইনজীবীরা বলেন, আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খালেদা জিয়া তিনটি আসন থেকে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। রিটার্নিং কর্মকর্তা ১২/১ (ঘ) অনুসারে মনোনয়নপত্র বাতিল করেছেন। এই ধারা নির্বাচনী অপরাধের সঙ্গে সম্পর্কিত।

শুনানিতে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা বলেন, খালেদার মনোনয়নপত্র বাতিলের কারণ হিসেবে রিটার্নিং কর্মকর্তা যা দেখিয়েছেন, সে অনুসারে খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র বাতিল সঠিক হয়নি। সে কারণে কমিশনের কাছে আপিল করা হয়েছে। তাঁরা বলেন, ‘প্রতিটি নাগরিকের অধিকার রয়েছে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার। সেই ক্ষেত্রে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে খালেদা জিয়াকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখার কোনো সুযোগ নেই। তারপরও, আইনগতভাবে খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার অধিকার রাখেন। যে আদেশ রিটার্নিং কর্মকর্তারা দিয়েছেন, আইনের দৃষ্টিতে তা বৈধ নয়। আমরা মনে করি নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করে যথাযথ আদেশ দেবে। এবং রিটার্নিং কর্মকর্তারা যে আদেশ দিয়েছেন, কমিশন তা বাতিল করবে। আমরা আশা করি, আগামী নির্বাচনে খালেদা জিয়া অংশ নেবেন।’

কোন কোন অপরাধের কারণে একজন ব্যক্তি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না? এখনো নির্বাচনের প্রচারণা হয়নি। তাই এ-সংক্রান্ত অপরাধের কোনো সুযোগ নেই। এখনো খালেদা জিয়া মার্কা নিয়ে রাস্তায় নামেননি। কাজেই তিনি এমন কোনো অন্যায় বা অপরাধ করেননি যেখানে নির্বাচনসংক্রান্ত বিধান দিয়ে খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র বাতিল করা যায়, যোগ করেন খালেদার আইনজীবীরা। আইনজীবীদের মতে, রিটার্নিং কর্মকর্তা যে আদেশ দিয়েছেন এখন তার ওপরই কমিশন আদেশ দিতে পারবে। এর বাইরে যাওয়ার আইনগত কোনো সুযোগ নাই।