কোটা সংস্কারের যৌক্তিক দাবির প্রতি সংহতি জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি। শিক্ষকেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ভবনে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে এর সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন। তাঁরা বলেছেন, এ হামলা পূর্বপরিকল্পিত ও ন্যক্কারজনক।
আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ভবন ও অন্যান্য ভবনে হামলাসহ উপাচার্যকে সপরিবারে হত্যার চেষ্টার প্রতিবাদে’ এই মানববন্ধন হয়।
মানববন্ধনে শিক্ষক সমিতির সভাপতি মাকসুদ কামাল বলেন, ‘কোটা সংস্কারে শিক্ষার্থীদের নৈতিক দাবির প্রতি সমর্থন আছে। আগামী ৭ মের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে যেন এর সমাধান হয়, দীর্ঘায়িত যেন না হয়, সেটাই আশা করি।’
গত রোববার এবং গতকাল সোমবার কোটা সংস্কারে আন্দোলনের সময় আহত শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় সহায়তা করা হবে বলে জানান মাকসুদ কামাল। তিনি বলেন, ‘পুলিশের পক্ষ থেকে যদি ভুলভ্রান্তি হয়ে থাকে, তারও নিন্দা জানাই। আন্দোলনের সময় একটি অংশ উপাচার্য ভবনে এসে হামলা চালায় এবং যে ভাষা প্রয়োগ করে, সে ভাষা কাম্য নয়। শিক্ষার্থীদের জানতে হবে শিক্ষকদের সঙ্গে কীভাবে ব্যবহার করতে হয়।’
মাকসুদ কামাল বলেন, এই হামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করার জন্য। তিনি শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরে আসার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, কোটা সংস্কারে প্রয়োজনে শিক্ষক সমিতি একটি নীতিমালা তৈরি করে সরকারে কাছে পাঠানোর চেষ্টা করবে।
মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক আখতার হোসেন খান বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের ওপর হামলা চালাতে পারে না। আন্দোলন যুক্তিযুক্ত থাকে ততক্ষণ, যতক্ষণ তা শান্তিপূর্ণ থাকে। কথায় কথায় উপাচার্য ও প্রক্টর অফিস ভাঙতে হবে কেন?’
মোহাম্মদ সামাদ বলেন, ‘স্বাধীন দেশে যে হামলা হয়েছে, এর বিচার চাই।’
মানববন্ধনে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সাদেকা হালিম বলেন, ‘এ হামলার ন্যক্কারজনক ও পূর্বপরিকল্পিত। যদি সেখানে প্রক্টোরিয়াল টিম ও অন্যান্য শিক্ষক না যেতে, তবে কী হতো জানি না।’ সাদেকা হালিম বলেন, কোটা সংস্কারের দাবি গণতান্ত্রিক অধিকার। শিক্ষার্থীরা তাঁদের ন্যায্য দাবি জানাতেই পারেন। তিনি বলেন, ‘আমরা আহতদের খোঁজখবর রাখছি। সামনে জাতীয় নির্বাচন। কোনো বিষয় নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল হতে দেব না।’
মানববন্ধনে অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, ‘উপাচার্যের ওপর হামলা ন্যক্কারজনক। আমাদের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে। সাম্প্রদায়িকতা তৈরি হয়েছে।’ তিনি বলেন, যাঁরা মুখ দেখাতে ভয় পেয়েছেন, তাঁরাই সেদিন মুখোশ পরে সেদিন হামলা চালিয়েছেন।
অধ্যাপক জিনাত হুদা বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে দ্বিমত করব না। কিন্তু যে রক্তাক্ত প্রক্রিয়া এটা হলো, এর উদ্দেশ্য কী ছিল?’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক নীলিমা আকতার বলেন, মাননীয় উপাচার্য সেদিন পুলিশ পর্যন্ত ডাকেননি। কোনো ছাত্রের ক্ষতি হতে পারে মনে করে তিনি পুলিশ ডাকেননি। নিজের ওপর নিয়েছেন। নীলিমা আকতার বলেন, ‘আন্দোলনকারীদের যৌক্তিক দাবির প্রতি আমাদের সমর্থন আছে। ছাত্র-শিক্ষক মুখোমুখি এমন ভাবার কারণ নেই।’
যোগাযোগ বৈকল্য বিভাগের শিক্ষক শান্তা তৌহিদা বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, আমাদের শিক্ষার্থীরা এ হামলা করতে পারে না। রাজনৈতিক কারণে এ হামলা হয়েছে।’