ঘরবাড়ি তৈরি ও নগরায়নের কারণে বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত কৃষি জমি কমছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধিসহ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বন্যা, খরা, লবণাক্ততা, বৈরী আবহাওয়া ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে খাদ্যশস্য উৎপাদন নানাভাবে ব্যাহত হচ্ছে। তারপরও কৃষিতে বাংলাদেশের সাফল্য ঈর্ষণীয়। বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উদাহরণ। ধান, গম ও ভুট্টা চাষে বিশ্বের গড় উৎপাদনকে পেছনে ফেলে ক্রমেই এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বের কারণেই এটা সম্ভব হচ্ছে। কৃষক যাতে তাদের ফলন বাড়াতে পারে এজন্য ৯ বছরে কৃষিতে ভর্তুকি প্রদান করা হয়েছে ৬০ হাজার ৮৬৫ কোটি টাকা।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম চাল উৎপাদনকারী দেশ। মাছ উৎপাদনেও চতুর্থ অবস্থানে বাংলাদেশ। দেশি-বিদেশি অনেক অর্থনীতিবিদ, বিশ্বব্যাংক, জাতিসংঘ, বিভিন্ন দাতাগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের অভিমতেও আমাদের অর্জনের স্বীকৃতি রয়েছে। কৃষির এমন সাফল্যে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, যেকোনো সরকারের জন্য আন্তরিকতাটাই সাফল্যের মূল চাবিকাঠি। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার সরকার বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করছে। বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন ক্ষুধামুক্ত ও দারিদ্রমুক্ত দেশ গড়ার। এ দেশের মানুষ যেন ভালো থাকে শেখ হাসিনার সরকার সে চেষ্টাই করছে। সরকারের একজন মন্ত্রী হিসেবে আমিও যথাযথভাবে আমার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। চেষ্টা করছি উৎপাদন বাড়ানোর। একই সঙ্গে কৃষিতে নতুন নতুন উদ্ভাবনের কারণে ও সরকারের কৃষিবান্ধব নীতির ফলে খাদ্যশস্য উৎপাদনে বাংলাদেশ অসামান্য সাফল্য অর্জন করেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ২০০৮-০৯ অর্থ-বছরে চাল, গম ও ভুট্টা ইত্যাদি দানাদার খাদ্যশস্য উৎপাদন হয়েছিল ৩ কোটি ২৮ লাখ ৯৫ হাজার মেট্রিক টন এবং ২০১৬-১৭ অর্থ-বছরে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৩ কোটি ৮৬ লাখ ৯৩ হাজার মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। চলতি অর্থ-বছরে কৃষিখাতে ভর্তুকি বাবদ ৯ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। গত অর্থ-বছরের আকস্মিক বন্যা, অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে হাওর এলাকার ৬টি জেলার ৬ লাখ ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের জন্য ১১৭ কোটি টাকার পুনর্বাসন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ১৮টি জেলার কৃষকদের জন্য চলতি অর্থ-বছরে ১৯ কোটি ৯৯ লাখ ৯৯ হাজার টাকার আরও একটি পুনর্বাসন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। কৃষির আধুনিকায়নের জন্য কৃষক পর্যায়ে ভর্তুকি মূল্যে কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হচ্ছে। বর্তমানে দেশে রাসায়নিক সারের চাহিদার বিপরীতে মজুদ পর্যাপ্ত রয়েছে এবং এ সরকারের আমলে সারের কোন সংকট হয়নি।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২০১৬-১৭ অর্থ-বছরে দেশে মৎস্য উৎপাদন ৪১ দশমিক তিন-চার লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। ফলে মাছের মাথাপিছু স্থিরকৃত দৈনিক চাহিদা ৬০ গ্রামের ভিত্তিতে মৎস্য উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। জাটকা এবং মা ইলিশ নিধন প্রতিরোধ কার্যক্রমের ফলে ইলিশের বার্ষিক উৎপাদন বর্তমানে প্রায় ৫ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। জাতীয় মাছ ইলিশের ‘ভৌগোলিক নিবন্ধন সনদ’ পাওয়া গেছে। এছাড়া পোল্টি ও প্রাণী সম্পদ সেক্টরে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের চলতি বছরে আলু উৎপাদন ১ কোটি ২ লাখ ১৬ হাজার মেট্রিক টন ও মিষ্টি আলু উৎপাদন ৮ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন, খাটো জাতের নারিকেলের প্রবর্তন, দেশি ও তোষা পাটের জীবনরহস্য আবিষ্কার এবং পাটসহ পাঁচ শতাধিক ফসলের ক্ষতিকর ছত্রাকের জীবনরহস্য উম্মোচন, ফসলের প্রতীক‚ লতা সহিষ্ণু ও উচ্চফলনশীল নতুন জাত উদ্ভাবন ও ১৭৯টি সেচ সুবিধা সম্প্রসারণ।
কৃষির উন্নয়নে সরকার ৪ দফা নন-ইউরিয়া সারের মূল্যহ্রাস করে (কেজিপ্রতি) টিএসপি ২২ টাকা, এমওপি ১৫ টাকা ও ডিএপি ২৫ টাকা মূল্য নির্ধারণ করেছে। ডিজিটাল কৃষি তথা ই-কৃষির প্রবর্তন (৪৯৯টি এআইসিসি, কৃষি কল সেন্টার, কৃষি কমিউনিটি রেডিও, সব সংস্থার তথ্যসমৃদ্ধ ওয়েবসাইট, মোবাইল অ্যাপস, ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন ও সফটওয়্যার, ই-বুক, ইন্টারনেট সংযোগ ইত্যাদি) করার কারণে কৃষক কৃষি বিষয়ে সেবা পাচ্ছেন।
বর্তমান সরকারের পরপর দুই মেয়াদে চার দফায় সারের দাম কমানো হয়। ১০ টাকার বিনিময়ে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। সেচের পানির ভর্তুকির টাকা সরাসরি কৃষকের একাউন্টে ট্রান্সফার করা হয় এবং সেই সঙ্গে ১ কোটি ৮২ লাখ কৃষকের মাঝে উপকরণ সহায়তা কার্ড বিতরণ করা হয়েছে। যুগান্তকারী এসব পদক্ষেপের ফলে কৃষিতে এসেছে ঈর্ষণীয় সাফল্য।