#

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শিশুদের জন্য একটি সুন্দর বাসযোগ্য বাংলাদেশ গড়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি। শিশুরা আমাদের ভবিষ্যৎ। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে আজকের শিশুরা আগামীতে দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। আগামীতে দেশের নেতৃত্ব দেবে তারা।

গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধ কমপ্লেক্সে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত জাতীয় শিশু দিবসের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৯তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে এ সভার আয়োজন করা হয়। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন শিশু প্রতিনিধি লামিয়া সিকদার।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিশুরা যাতে আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারে, শিক্ষা ও খেলাধুলায় পারদর্শী হয়ে ওঠে সেদিকে দৃষ্টি রয়েছে আমাদের। বঙ্গবন্ধু যেভাবে দেশটা গড়তে চেয়েছেন ঠিক তার স্বপ্নের দেশ গড়তে কাজ করছি।

বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, মাত্র সাড়ে তিন বছর দেশ পরিচালনার সময় পেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। এরই মধ্যে শিশুদের জন্য প্রাথমিক শিক্ষাকে অবৈতনিক করেছিলেন তিনি। মাধ্যমিক পর্যন্ত তিনি মেয়েদের শিক্ষা অবৈতনিক করেন। বঙ্গবন্ধু অনেক দূরদর্শী ছিলেন। ১৯৭৪ সালে শিশুদের অধিকার সংরক্ষণে আইন প্রণয়ন করেন। জাতিসংঘ শিশুদের জন্য তখনও কোনো আইন করেনি। জাতিসংঘ ১৯৮৯ সালে শিশুদের জন্য আইন করেছে। পরবর্তীতে ২০১১ সালে বঙ্গবন্ধুর সেই উদ্দেশ্যের আলোকে আমরা জাতীয় শিশু নীতি প্রণয়ন করি। শিশুর অধিকার সুরক্ষার পাশাপাশি ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে শিশুদের পরিচয় করে দিচ্ছি আমরা।

শিশুদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা একেবারে তৃণমূল পর্যায় থেকে দেশের সব শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে বই দিচ্ছি। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিশুদের ব্রেইল বইয়ের ব্যবস্থা করেছি। মোবাইলের মাধ্যমে উপবৃত্তির টাকা পৌঁছে দিচ্ছি। স্কুলে টিফিনের ব্যবস্থা করেছি। মেয়েদের জন্য সুব্যবস্থা করেছি, যাতে আমাদের মেয়েরা মানুষের মতো মানুষ হয়।

তিনি বলেন, মার্চ মাস জাতির জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাস। এই মাসে জাতির পিতা ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ দেন। এই মাসে জাতির পিতা জন্মগ্রহণ করেন। এই মাসে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন তিনি। এই মাসে আমরা জাতির পিতার ৯৯তম জন্মদিন পালন করছি। আগামীতে আমরা জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করব। ২০২০-২০২১ সালকে ‘মুজিব বর্ষ’ হিসেবে ঘোষণা করেছি আমরা।

শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুর আত্মত্যাগ এবং তিনি যেভাবে দেশ ও দেশের মানুষকে ভালোবেসেছেন তা অন্যকোনো নেতার মধ্যে ছিল না। দেশের মানুষ ছিল নিপীড়িত, বঞ্চিত ও দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত। ছোটবেলা থেকেই এই মানুষগুলোকে দেখে বঙ্গবন্ধুর হৃদয় কাঁদতো। তাই তিনি জীবনের সবকিছু বিলিয়ে দিয়েছিলেন এসব মানুষের কল্যাণে।

জাতির পিতার স্বপ্নের কথা শিশুদের স্মরণ করিয়ে দিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে সুন্দর দেশ হিসেবে গড়তে চেয়েছেন বঙ্গবন্ধু। এদেশের প্রতিটি শিশু শিক্ষা ও উন্নত জীবন পাবে এটাই ছিল বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন। কিন্তু জাতির পিতা তার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারলেন না। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে ঘাতকের বুলেট জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করে। আমার মা, ভাই মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামাল, শেখ জামাল, তাদের স্ত্রী, ছোট ভাই শিশু রাসেল ও আমার একমাত্র চাচা শেখ আবু নাসেরকে হত্যা করে ঘাতকরা। তারা আমার তিন ফুফুর বাড়িতে আক্রমণ করে। তাদের ওপর হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়। হত্যাযজ্ঞে প্রতিটি পরিবারের সদস্যরা নিহত হয়।

সেদিনের দুঃসহ স্মৃতি আমাকে তাড়িয়ে বেড়ায়, বলেই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন প্রধানমন্ত্রী। চোখের পানি মুছতে মুছতে শেখ হাসিনা বলেন, আমি পরিবার হারিয়েছি, আপনজন হারিয়েছি। আমরা দুই বোন বিদেশে ছিলাম বলে প্রাণে বেঁচে যাই। কিন্তু সেদিন বাংলাদেশের মানুষ হারিয়েছিল তাদের বেঁচে থাকার সব সম্ভাবনা, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। ১৯৭৫ সালের পর আমাদের শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণী কেউই মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে পারেনি। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে। তবে সত্যকে কখনও মিথ্যা দিয়ে ঢাকা যায় না। সত্যের জয় একদিন হবেই। সেটাই প্রমাণ হয়েছে আজ, সত্য উদ্ভাসিত হয়েছে ঠিকই।

শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। ২১ বছর ওই ভাষণ বাজানো যেত না। বাধা উপেক্ষা করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ভাষণ বাজাতে গিয়ে আঘাত পেয়েছেন। জীবন দিতে হয়েছে অনেককে। তারপরও ওই ভাষণ তারা ধরে রেখেছেন। তাদের এই আত্মত্যাগের মাধ্যমে ঐতিহাসিক ভাষণটি আজ জাতিসংঘের স্বীকৃতি পেয়ে বিশ্ব দরবারে মর্যাদা পেয়েছে। পাশাপাশি ইউনেস্কো কর্তৃক আন্তর্জাতিক দলিলে স্থান পেয়েছে ভাষণটি। বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বল করেছে এই ভাষণ।

দেশকে এগিয়ে নেয়ার দৃঢ় প্রত্যয়ের কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘ছাড়পত্র’ কবিতার কয়েকটি চরণ আবৃত্তি করে শোনান। তিনি আবৃত্তি করে বলেন, ‘চলে যাব- তবু আজ যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ/ প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল/ এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি/ নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।’

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন, বাংলাদেশ শিশু একাডেমির চেয়ারম্যান কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন শিশু প্রতিনিধি আরাফাত হোসেন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুন নাহার, ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার এএম আলী আজম ও গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ মোখলেসুর রহমান সরকার।

বক্তব্য শেষে সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শিশুদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। পরে প্রধানমন্ত্রীকে গোপালগঞ্জ জেলা ব্র্যান্ডিংয়ের লোগোর রেপ্লিকা প্রদান করা হয়। এরপর বঙ্গবন্ধুকে লেখা চিঠি গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী।

এর আগে সকাল সোয়া ১০টায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৯তম জম্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে টুঙ্গিপাড়ায় সমাধিসৌধে বিনম্র শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

উত্তর দিন

Please enter your comment!
এখানে আপনার নাম লিখুন