আস্থা ভোটে জিতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার মেয়র হলেন ফিরহাদ হাকিম। তিনি রাজ্যের ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক। ভারতের স্বাধীনতার পর তিনিই কলকাতর প্রথম মুসলিম মেয়র।
গতকাল সোমবার আস্থা ভোট হয়। গতকালই শপথ নেন ‘ববি হাকিম’ নামে বেশি পরিচিত ফিরহাদ।
কলকাতা পৌর করপোরেশনের মেয়র পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। মমতার খুব কাছের লোক শোভন চট্টোপাধ্যায় ২০১০ সালে থেকে এই পদে ছিলেন। গত ২২ নভেম্বর তিনি মুখ্যমন্ত্রীর ধমকে পদত্যাগ করেন। এরপরই মমতা পশ্চিমবঙ্গের পৌর ও নগর উন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে এই পদে বসান। যদিও ফিরহাদ হাকিম পৌর করপোরেশনের কাউন্সিলর ছিলেন না। তাঁকে মেয়র করার জন্য মমতা রাজ্য বিধানসভায় পৌর আইন সংশোধন করে এই পদে নিয়ে আসেন। আগামী ছয় মাসের মধ্যে ফিরহাদ হাকিমকে কলকাতার পৌর করপোরেশনের যেকোনো একটি এলাকা থেকে জয়ী হয়ে আসতে হবে।
গতকাল কলকাতা সিটি করপোরেশন ভবনে সকালে ভোট হয়, বিকেলে ফলাফল। তারপর শপথ গ্রহণ। করপোরেশনে কাউন্সিলর আছেন ১৪৪ জন। এর মধ্যে তৃণমূলের ১২২ জন। বামফ্রন্টের ১৪ বিজেপির ৫ এবং কংগ্রেসের ২ জন। বিজেপি এই পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ফিরহাদকে জয়ী হতে না দেওয়ায় প্রার্থী মেয়র পদে প্রার্থী দাঁড় করান দলীয় কাউন্সিলর মীনাদেবী পুরোহিতকে। তৃণমূলের এক কাউন্সিলরের মৃত্যুতে তৃণমূলের কাউন্সিলর সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ১২১–এ। তৃণমূলের ১২১ জন কাউন্সিলরই ফিরহাদকে ভোট দেন। ভোট দেন পদত্যাগী মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ও। বিজেপি প্রার্থী পান ৫ ভোট। বাম দল এবং কংগ্রেস নির্বাচন বয়কট করে। তারা দাবি করেছে, এই আস্থা ভোট অগণতান্ত্রিক। যদিও এর বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেছে তারা।
নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর ফিরহাদ হাকিম শপথ নিয়ে বলেছেন, ‘আমার নাম-ধর্ম নিয়ে বিচার-বিবেচনা করতে হবে না। আমার কাজটাই দেখো। আমার কাছে চেয়ার বা পদ বড় কথা নয়। দায়িত্বটা মুখ্য। মেয়র হিসেবে কলকাতার উন্নয়নই প্রথম ও প্রধান লক্ষ্য। দল আমাকে অনেক দায়িত্ব দিয়েছে। আমি সব দায়িত্ব সততার সঙ্গে পালন করতে চাই।’ ফিরহাদ হাকিম এদিন শপথ নেন ধুতি এবং পাঞ্জাবি পরে।
স্বাধীনতার আগে কলকাতায় পাঁচজন মুসলিম মেয়র হয়েছেন। এঁরা হলেন শেরেবাংলা আবুল কাশেম ফজলুল হক (১৯৩৫), এ কে এম জাকারিয়া (১৯৩৮), আবদুর রহমান সিদ্দিকী (১৯৪০), সৈয়দ বদরুদ্দোজা (১৯৪৩) ও সৈয়দ মুহাম্মদ উসমান (১৯৪৬)। প্রথম মেয়র হয়েছিলেন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস (১৯২৪)। নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু মেয়র হয়েছিলেন (১৯৩০) এবং ডা. বিধানচন্দ্র রায় মেয়র হয়েছিলেন ১৯৩১ সালে। স্বাধীনতাপূর্ব শেষ মেয়র ছিলেন সুধীর চন্দ্র রায় চৌধুরী (১৯৪৭)।