মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি করে ধৃষ্টতাপূর্ণ ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারের কারণে পাকিস্তানের ঢাকাস্থ রাষ্ট্রদূত রাফিউজ্জামান সিদ্দিকীকে তলব করে কড়া ভাষায় প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ। এছাড়া পাকিস্তানের উদ্দেশ্যমূলক উস্কানি সীমার বাইরে গেলে ভিন্ন ব্যবস্থা নেবে বাংলাদেশ, এমন কথাও সাফ জানিয়ে দেয়া হয়েছে পাকিস্তান হাই কমিশনারকে।
মঙ্গলবার বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব কামরুল আহসান পাকিস্তান হাইকমিশনারকে তলব করেন।
উল্লেখ্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নন, জিয়াউর রহমানই বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক, এ রকম একটি ভিডিও পাকিস্তান হাইকমিশন তাদের ফেসবুক পেজে শেয়ার দেয়। ভিডিওটি আপলোড করা হয়েছে পোস্ট পাকিস্তান অ্যাফেয়ার্স নামে একটি ফেসবুক পেজ থেকে। ভিডিওতে আরও দাবি করা হয়, শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতাই চাননি, তিনি স্বায়ত্তশাসন চেয়েছিলেন। পরে এ নিয়ে আলোচনা শুরু হলে হাইকমিশনের ফেসবুক পেজ থেকে ভিডিওটি সরিয়ে ফেলা হয়।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, হাইকমিশনের অফিসিয়াল ফেসবুকে কিছু প্রকাশ করার অর্থ সেটি দায়িত্ব নিয়েই প্রচার করা। এর আগেও বিভিন্ন সময় পাকিস্তান হাইকমিশনের ফেসবুক পেজে বিদ্বেষমূলক প্রচারণা চালানো হয়েছে। এবার ঐতিহাসিকভাবে স্বীকৃত বিষয়াদি নিয়ে পাকিস্তান হাইকমিশনের নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টির চেষ্টা উদ্দেশ্যপূর্ণ ও দূরভিসন্ধিমূলক। ২০০৯ সালের ২১ জুন বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক ও বিচারপতি মমতাজ উদ্দিন আহমেদের হাইকোর্ট বেঞ্চ এক রায়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকেই স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে রায় দেন।
এদিকে পাকিস্তানি হাইকমিশনারকে তলব করে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব (বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব) কামরুল আহসান ৫০ মিনিট কথা বলেন এবং বাংলাদেশের পক্ষ থেকে একটি প্রতিবাদ লিপি ধরিয়ে দেন। পরে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব কামরুল আহসান সাংবাদিকদের বলেন, স্বাভাবিক কূটনৈতিক নিয়মের অংশ হিসেবে পাকিস্তানের হাইকমিশনারকে ডাকা হয়েছিল। আমরা বলেছি হাইকমিশনের পক্ষ থেকে যে ভিডিওটি ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে, সেটা দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। পাকিস্তানকে সতর্ক করা হয়েছে।
তিনি বলেন, হাইকমিশনারকে বলা হয়েছে যে, ইতিহাস পরিবর্তনশীল নয়। যেটা বাস্তবতা সেটা সবাইকে মেনে নিতে হবে। অপপ্রচার করে ইতিহাসকে ভিন্ন পথে পরিচালনা করা যাবে না। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধুর নামেই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ পরিচালতি হয়েছে।
সচিব জানান, তারা জানিয়েছে যে হাইকমিশন ভিডিও লিংকটি সরিয়ে ফেলেছে। এজন্য পাকিস্তান দুঃখ প্রকাশ করেছে। তারা জানিয়েছে যে, এটি একটি অনিচ্ছাকৃত ব্যাপার ছিল। আমরা প্রতিবাদ করেছি। আমরা বলেছি এ ধরনের ইতিহাস বিকৃতি অব্যাহত রাখলে সেটা দুই দেশের সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
বাংলাদেশ পাকিস্তানের ব্যাখ্যা মেনে নিল? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, বাংলাদেশ মনে করছে এটি ইচ্ছাকৃত। এর আগেও তারা এ ধরনের কাজ করেছে। আমরা হাইকমিশনারকে তা মনে করিয়ে দিয়েছি। প্রতিবারই তারা দুঃখ প্রকাশ করে। কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে কিছু করে, সে কি আপনার কথা শুনবে। কিন্তু আমাদের যেটি করার দরকার কূটনৈতিকভাবে প্রতিবাদ আমরা সেটি করেছি। সেটি যদি সীমার বাইরে চলে যায়, আমাদের আরও অনেক পথ রয়েছে।
এদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেছেন, আমরা সব সময় তৈরি যেকোনো ষড়যন্ত্র মোকাবিলায়। তিনি বলেন, ওরা তো এমন কাজ করেই থাকে। আমরা সব সময় তৈরি যেকোনো ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে। তারা এটা (ভিডিও) সরিয়ে ফেলেছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা চেষ্টা করছি স্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে। সম্পর্ক ছিন্ন করতে চাই না। তাদের সঙ্গে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের আলোচনা অনেক দিন আটকে আছে। আবার চালু করার প্রস্তাব দিয়েছি।