 
                                            
                                                                                            
                                        
আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বরিশাল-ঢাকা নৌ রুটে যুক্ত হচ্ছে বিলাসবহুল যাত্রীবাহী দুটি নতুন জাহাজ। আগামী ৬ জুন ঢাকার সদরঘাটে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন হবে মেসার্স নিজাম শিপিং লাইন্সের ব্যানারে নির্মিত জাহাজ দুটি।
দুটি জাহাজের একটি এমভি এ্যাডভেঞ্চার-৯ রাত্রীকালীন এবং অপরটি এমভি এ্যাডভেঞ্চার-৫ চলবে দিবাকালীন সার্ভিসে। এখন শেষে মুহূর্তে রং তুলির আঁচরসহ খুঁটিনাটি পরীক্ষা চলছে জাহাজ দুটিতে। সব কিছু ঠিক থাকলে উদ্বোধনের একদিন পর আগামী ৭ জুন যাত্রী নিয়ে জাহাজ দুটি বরিশালের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
নগরীর অদূরের ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার দপদপিয়ায় কীর্তনখোলা নদীর তীরে নিজাম শিপিং লাইন্সেরর নিজস্ব ডকইয়ার্ডে প্রায় ২ বছর ধরে নির্মিত হয়েছে এ্যাডভেঞ্চার-৯ এবং এ্যাডভেঞ্চার-৫। একই ডকইয়ার্ডে প্রায় এক বছর আগে নির্মিত এ্যাডভেঞ্চার-১ নামে আরেকটি জাহাজ বরিশাল-ঢাকা রুটে চলাচল করছে।
৩১০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৫০ ফুট প্রস্থ এবং ৪ তলা বিশিস্ট এ্যাডভেঞ্চার-৯ জাহাজে রয়েছে লিফট, মিনি জিমনেশিয়াম, প্লে-গ্রাউন্ড, ফুড কোর্ট এরিয়া, চিকিৎসা কেন্দ্র এবং ফ্রি ওয়াইফাই সুবিধা। এই জাহাজে রয়েছে ৯৫টি ডবল ও ৮৫টি সিঙ্গেল কেবিন, একটি ডুপ্লেক্স সহ ৬টি ভিআইপি কেবিন, ৪টি সেমি ভিআইপি, ৬টি ফ্যামিলি কেবিন এবং ৩০টি স্লিপিং সোফা রয়েছে। কেবিনে যাতায়াতের জন্য রয়েছে সুবিশাল বারান্দা। নৌযানটিতে যাত্রী নিরাপত্তায় বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা।
জার্মানির তৈরি ৩ হাজার ২শ’ হর্স পাওয়ারের দুটি মূল ইঞ্জিন ছাড়াও নৌযানের বাতানুকূল প্রথম শ্রেণী এবং ভিআইপি কক্ষসহ ডেকের যাত্রীদের জন্য পর্যাপ্ত আলো ও বাতাস নিশ্চিতকরণে তিনটি শক্তিশালী জেনারেটর এবং একটি স্ট্যান্ডবাই জেনারেটর সংযোজন করা হয়েছে।
হুইল হাউসে (মাস্টার ব্রীজ) সম্পূর্ণ অত্যাধুনিক প্রযুক্তির যন্ত্রাংশ সংযোজন করা হয়েছে। এর রাডার এবং সুকান ‘ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিক’ ও ম্যানুয়াল দ্বৈত পদ্ধতিতে ব্যবহার করা যাবে। পাশাপাশি জিপিএস পদ্ধতি সংযুক্ত করা হয়েছে। ফলে লঞ্চটি চলাচলরত নৌপথের এক বর্গকিলোমিটারের মধ্যে গভীরতা ছাড়াও এর আশপাশের অন্য যেকোনো নৌযানের উপস্থিতি চিহ্নিত করতে পারবে।
দক্ষ প্রথম শ্রেনীর মাস্টার, সুকানী ও ইঞ্জিন চালক (ড্রাইভার) ছাড়াও মোট ৫৫জন বিভিন্ন শ্রেনীর ক্রু নিয়োগ করা হয়েছে। ডেক শ্রেনীর ভাড়া আড়াই শ’ টাকা করে সর্বোচ্চ ৮ হাজার টাকার ডুপ্লেক্স কেবিন রয়েছে অ্যাডভেঞ্চার-৯ লঞ্চে।
এদিকে ঢাকা প্রান্ত থেকে একই কোম্পানীর দিবাকালীন সার্ভিসের এ্যাডভেঞ্চার-৫ যাত্রী পরিবহনে সংযুক্ত হচ্ছে একই দিন। সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ক্যাটামেরিন পদ্ধতির দ্বিতল এই জাহাজে ৫২০টি আসন রয়েছে। এরমধ্যে নীচতলার ৩শ’ আসন ৭শ’ টাকা এবং দোতালার ২শ’ আসনের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার টাকা। এছাড়া ভিআইপিদের জন্য ২০টি আসন রাখা হয়েছে ১২শ’ টাকা করে।
এ্যাডভেঞ্চার শিপিং লাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরিশাল মেট্রোপলিন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি এবং এফবিসিসিআই’র পরিচালক মো. নিজাম উদ্দিন জানান, বিলাস বহুল জাহাজ দুটি আগামী ৭ জুন ঢাকা সদর ঘাট থেকে প্রথমবারের মতো যাত্রী নিয়ে বরিশালের উদ্দেশে রওয়ানা দেবে। এর আগে ৬ জুন সদরঘাটে আনুষ্ঠানিকভাবে জাহাজ দুটির উদ্বোধন করবেন নৌ পরিবহন মন্ত্রী মো. শাজাহান খান এমপি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু এমপি এবং এফবিসিসিআই’র সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন সহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত থাকবেন।
এর আগে গত শুক্রবার এ্যাডভেঞ্চার-৯ লঞ্চটি কীর্তনখোলা নদীতে পরীক্ষামূলকভাবে চালানো হয়। দুপুরে দপদপিয়া থেকে চরমোনাই গিয়ে চরমোনাই পীর মাওলানা মুফতী সৈয়দ রেজাউল করিমের উপস্থিতিতে পুরো জাহাজটি ঘুরিয়ে দেখানো হয়। এ সময় জাহাজের সাফল্য কামনায় বিশেষ দোয়া- মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় যাত্রী পরিবহন সংস্থার চেয়ারম্যান মাহবুব উদ্দিন আহমেদ (বীর বিক্রম) এবং নিমাজ শিপিং লাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিজাম উদ্দিন সহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
নিজাম উদ্দিন আরও জানান, ৪ তলা বিশিষ্ট জাহাজে লিফট ছাড়াও ওয়াইফাই, শিশু বিনোদনের জন্য বেবী কর্নার, খাবারের জন্য মানসম্মত হোটেল, কফি ও টি হাউস রয়েছে। প্রথম শ্রেনীর কেবিনগুলো বানানো হয়েছে বিলাসবহুল তিন তারকা আবাসিক হোটেলের আদলে। ব্যয়বহুল ও দৃষ্টিনন্দন আসবাবপত্রে সাজানো রয়েছে প্রতিটি কক্ষ। ঐতিহ্য আর আধুনিকতার সমন্বয়ে ভ্রমনের জন্য যাত্রীদের নিরাপদ ও বিলাসবহুল সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে জাহাজে। জমি ভাড়া এবং শ্রমমূল্য তুলনামূলক কম থাকায় ঢাকাসহ অন্যান্য স্থানের চেয়ে জাহাজ দুটি নির্মাণে ৩০ ভাগ খরচ কম হয়েছে বলে জানান শিল্পপতি নিজামউদ্দিন।