#

প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, শিক্ষার্থীদের মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে শিক্ষকদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ইসলাম ধর্মের অপব্যাখ্যা ও জঙ্গিবাদ সম্পর্কে সচেতন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ইসলাম ধর্ম শান্তির ধর্ম। কোরআন ও হাদিসের আলোকে তা তরুণ শিক্ষার্থীদের বোঝাতে দেশের আলেম সমাজ সক্রিয় সহযোগিতা করছেন।

বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় সংসদে চট্টগ্রাম-৪ আসেনর সংসদ সদস্য দিদারুল আলমের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এ সময় প্রশ্নকর্তা প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চান, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, অনুগ্রহ করিয়া বলিবেন কি, মেধাবী শিক্ষার্থীরা যেন বিপথগামী হইয়া জঙ্গিবাদে জড়াইয়া না পড়ে, সেই জন্য শিক্ষক ও অভিভাবকদের সচেতন করিবার লক্ষ্যে সরকার কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করিয়াছে কি না এবং করিলে তাহা কী?’

জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার সবার জন্য মানসম্মত শিক্ষার সমান সুযোগ নিশ্চিত করার মাধ্যমে বাংলাদেশের উন্নয়নকে টেকসই করতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে আমরা বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহে ছাত্রছাত্রীদের বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি চর্চায় উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি ধর্মীয় মূল্যবোধ, নৈতিকতা, সময়ানুবর্তিতা এবং সততার অনুশীলন করানো হচ্ছে। মেধাবী শিক্ষার্থীরা যেন বিপথগামী হয়ে জঙ্গিবাদে না জড়িয়ে পড়ে, সেজন্য আমরা শিক্ষক ও অভিভাবকদের সচেতন করার লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। এগুলো হলো-শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জঙ্গিবাদবিরোধী নানামুখী সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে ; যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া ১০ দিনের বেশি অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শনাক্ত করছে; অনুপস্থিত ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবকের সঙ্গে আলোচনা করে অনুপস্থিতির কারণ সন্দেহজনক বলে প্রতীয়মান হলে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে; শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়মিত অভিভাবক, শিক্ষক, ছাত্রছাত্রীর সমন্বয়ে অভিভাবক সমাবেশ আয়োজন করা হচ্ছে।’

‘শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সমাজের গণ্যমান্য ও মিডিয়া ব্যক্তিত্বদের নিয়ে সন্ত্রাসী ও ধর্মের নামে জঙ্গিবাদবিরোধী সভা করা হচ্ছে; কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে শিক্ষার্থীদের জন্য এক্সট্রা-কারিকুলাম অ্যাক্টিভিটিজ যেমন-খেলাধুলা, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, শিক্ষাবিষয়ক সেমিনার, প্রদর্শনী, মেলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ইত্যাদি পরিচালনা করা হচ্ছে; শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেশপ্রেম জাগ্রত করতে ও নৈতিক শিক্ষা প্রদানে পাঠ্যপুস্তকে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে।’

‘পাঠ্যপুস্তকে মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস সন্নিবেশিত করা হয়েছে। বিভিন্ন জাতীয় দিবসে যেমন-২৬ মার্চ, ১৬ ডিসেম্বর এবং ৬ দফা আন্দোলন, ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ৫২-এর মহান ভাষা আন্দোলন ইত্যাদি বিষয়ে শিশু-কিশোরদের অবহিত করার জন্য পাঠ্যপুস্তকে তা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহে মুক্তিযুদ্ধ কর্নার নির্মাণ করা হচ্ছে।’

‘বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন থেকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষ হতে শুরু করে প্রতিটি হল ও ক্যাম্পাসে সার্বক্ষণিক ডিজিটাল সিকিউরিটি সিস্টেম ব্যবহার করে ছাত্রছাত্রীদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা জোরদার ও মনিটরিং করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে নিরাপদে থাকুক এবং মুক্তচিন্তা, উদার দৃষ্টিভঙ্গিতে বেড়ে উঠুক সে প্রত্যাশায় বাংলাদেশ রিসার্চ অ্যান্ড এডুকেশন নেটওয়ার্কের (BDREN) মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়সমূহকে বহির্বিশ্বের গবেষণা ও শিক্ষা নেটওয়ার্কের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০’ অনুযায়ী বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় স্বার্থে ও শিক্ষার্থীদের স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর বিবেচিত হতে পারে-এমন কোনো কার্যকলাপে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণ করবে না এবং সন্ত্রাসী বা জঙ্গি তৎপরতা বা এই জাতীয় কোনো কার্যকলাপে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে কোনোভাবেই কোনো পৃষ্ঠপোষককতা করা যাবে না মর্মে সকল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’

জঙ্গি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় যেন কোনোভাবে সম্পৃক্ত থাকতে না পারে, সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যানকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহে জঙ্গিবাদবিরোধী ব্যানার, ফেস্টুন সরবরাহ করা হয়। জেলা/ উপজেলা পর্যায়ে আয়োজিত জঙ্গিবাদবিরোধী র‌্যালি/সমাবেশে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে সারাদেশে সর্বস্তরের জনসাধারণ, শিক্ষক, অভিভাবক, বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে জঙ্গিবাদের কুফল তুলে ধরে বিভিন্ন গণসচেতনতামূলক কর্মসূচি আয়োজন করা হচ্ছে। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে গৃহীত এ সকল গণসচেতনতামূলক প্রচারণা প্রিন্ট মিডিয়া, টিভি চ্যানেল, অনলাইন ও সামাজিক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে তুলে ধরা হচ্ছে।’

প্রধানমন্ত্রী প্রশ্নোত্তরে আরও বলেন, জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ চালু হওয়ার ফলে অন্যান্য অপরাধের মতো জঙ্গি কর্মকাণ্ডের সংবাদ তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় জঙ্গিবাদ দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

উত্তর দিন

Please enter your comment!
এখানে আপনার নাম লিখুন