আর্জেন্টিনার ফুটবলার ফাইনালে খুনের হুমকি পেয়েছিল

লেখক:
প্রকাশ: ৬ years ago

ইতিহাসের প্রথম ফুটবল বিশ্বকাপ। তার ফাইনাল। সেখানেও প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগ। কারণ ছিল বৈকি। ১৯৩০ বিশ্বকাপ ফাইনালে মুখোমুখি উরুগুয়ে-আর্জেন্টিনা। তার আগে অলিম্পিকে মুখোমুখি হয়েছিল এই দু’দল। আর্জেন্টিনার মধ্যে তখন শুধু প্রতিশোধের আগুন জ্বলছে না। লাল শিখাও উড়ছে। বুয়েনাস আয়ার্স থেকে ওই ম্যাচ দেখতে কয়েকশ’ আর্জেন্টিনা সমর্থক সকালে নৌকায় করে মন্টিভিডিও পৌঁছাল। ফাইনাল দেখবে। আর্জেন্টিনার হয়ে গলা ফাঁটাবে। আর যারা আসতে পারল না তারা ওপার থেকে বিদায় দিল- ‘আর্জেন্টিনা সি, উরুগুয়ে নো’ বলে।

এপারে পৌঁছাতে না পৌঁছাতেই উরুগুয়ে পুলিশ তাদের ঘিরে ধরল। দেহ তল্লাশি চালালো তাদের। খুঁজল আগ্নেয়াস্ত্র সঙ্গে নিয়ে এসেছে কি-না। সেই ম্যাচে খুনের হুমকি দেওয়া হয় আর্জেন্টিনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় এবং মিডফিল্ডার লুইস মন্তিকে। আর পুরো আর্জেন্টিনা দল ২৪ ঘণ্টা পুলিশি পাহারায় থাকে ম্যাচের আগে।

এদিকে ম্যাচ রেফারি বেলজিয়ামের জন ল্যাঙ্গেনেস। তাকে হুমকি দিয়ে চলেছে উরগুয়ের সমর্থকরা। তিনি উরুগুয়ে পুলিশের কাছে নিরাপত্তার দাবি করলেন। তাছাড়া আর যাবেনই বা কোথায়! কিন্তু পুলিশ তাকে দিল পালানোর পরামর্শ। পুলিশের পরামর্শ হলো, ম্যাচের শেষ বাঁশিতে ফু দিয়েই দৌড়ে পাশের বন্দরে চলে যাবেন। সেখানে তখন তার জন্য নৌকা ভেড়ানো থাকবে! প্রত্যেকের দুটো করে চোখ ফাঁকি দিয়ে তিনি কিভাবে নদী তিরে পৌঁছাবেন সে নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছিল তাকে। চিনিয়ে দেওয়া হয়েছিল রাস্তা ও নৌকা।

ওদিকে ফাইনালে ছিল বল বিতর্ক। পাড়ার মাঠে খেলা হলে প্রতিপক্ষের বল দিয়ে যত বেশি খেলা যায় এই থাকে প্রবণতা। আর এ ম্যাচে দুই দেশই চাইছিল তাদের তৈরি বল দিয়ে খেলতে। অবশেষ রেফারি সিদ্ধান্ত দেন, ম্যাচের দুই অর্ধ দুই দেশের বল দিয়েই খেলা হবে। ঠিক গড়ের মাঠের খেলার মতো। সে মতেই শুরু হয় প্রথম বিশ্বকাপের ফাইনাল।

উরুগুয়ের অধিনায়ক হোসে নাসাজি তখন বিশ্বসেরা ফুলব্যাক। আর আর্জেন্টিনার মন্তি তখন জনপ্রিয় তারকা। ১৭ মিনিটে প্রথম গোল আর্জেন্টিনার। এখানেও বিতর্ক। উরুগুয়ের অধিনায়কের প্রতিবাদ গোলটি অফসাইড ছিল। দ্বিতীয়ার্ধে টাফ ফুটবল খেলতে থাকে উরুগুয়ে। শেষ পর্যন্ত তারাই ম্যাচটি জিতে নেয় ৪-২ গোলে।

রেফারি কিন্তু কথা মতোই বাঁশিতে শেষ ফু দিয়েই দৌড় দেন নৌকা ধরতে। ওদিকে মাঠে তখন প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের আনন্দ করতে গিয়ে মৃত্যু হয় এক উরুগুয়ের সমর্থকের। বুয়েনাস আয়ার্সের উরুগুয়ে দূতাবাসে তখন ইট-পাটকেল পড়তে থাকে। উরুগুয়েতে তখন চলছে জাতীয় ছুটি। আর আর্জেন্টিনার আট ফুটবলারের আর জাতীয় দলের জার্সি পরা হয়নি ওই ফাইনালের পর। আর এভাবেই ইতিহাসে সাক্ষী থেকে যায় বিশ্বকাপ ফুটবলের প্রথম আসরটি।