অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমকে উদ্দেশ করে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, আপনারা প্রধান বিচারপতি ও কোর্টের স্বাধীনতা খর্ব করতে করতে এমন জায়গায় নিয়ে যাচ্ছেন আমরা কি কিছুই বলতে পারবো না? আমরা কি কোর্টে বসে মন্তব্য করতে পারবো না?
মঙ্গলবার (১ আগস্ট) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের দিয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা সংক্রান্ত আপিল শুনানিতে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে ছয় বিচারপতির আপিল বেঞ্চে এ মন্তব্য করেন তিনি।
ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পর সংসদে এই নিয়ে সমালোচনা এবং অধস্তন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধি নিয়ে সোমবার আইনমন্ত্রীর আনিসুল হকের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে আদালত থেকে এ বক্তব্য আসল।
সোমবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘তারা (সুপ্রিম কোর্ট) সংশোধন করে যেটা দিয়েছিলো সেখানে দেখা গেছে, আমার কাছে ডকুমেন্ট আছে, ১১৬ অনুচ্ছেদে মহামান্য রাষ্ট্রপতির যে ক্ষমতা সেটা তারা নিয়ে নিতে চায়। আমি কি করে সেটা দেই? আপনারা আমাকে রায় দিয়ে দেন, বলেন? আমি তো দিতে পারি না।’
এ সময় আইনমন্ত্রী মাসদার হোসেন মামলার শুনানিকালে গত রবিবার প্রধান বিচারপতির মন্তব্যের সমালোচনাও করেন।
মঙ্গলবার সকালে ভ্রাম্যমাণ আদালত সংক্রান্ত মামলার শুনানিকালে প্রধান বিচারপতি বলেন, আপনারা জাজদের মধ্যে ডিভিশন সৃষ্টি করতে চাচ্ছেন। আমরা কি কোর্টে বসে মন্তব্য করতে পারবো না? কিছু কিছু মন্ত্রী এজলাসে বসে কথা বলার বিষয়ে মন্তব্য করেন। এটা কি ফেয়ার? আপনাকে প্রশ্ন করছি।’
তখন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘দুই দিক থেকে বক্তব্য আসে। বক্তব্য মিডিয়া লুফে নেয়।’
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আপনি কেন এ কথা বলছেন? বিচারে আমরা পলিটিক্যাল মন্তব্য দেই না। বিচার বিভাগ সংক্রান্ত বক্তব্য দেই। বিচার বিভাগে যখন যে ইস্যু চলে আসে। যেমন আজকে মোবাইল কোর্ট সম্পর্কে। না বললে কি থাকলো। মাসদার হোসেন মামলার ক্ষেত্রেও তাই। আমরা পলিটিক্যাল কথা বলছি না।’
তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, পলিটিক্যাল কথা বলছি না। মি. অ্যাটর্নি জেনারেল আপনারা জাজদের মধ্যে ডিভিশন সৃষ্টি করতে চাচ্ছেন। কোর্ট প্রসিডিংসে আদালতের কার্যক্রমে যা হয় তা নিয়ে পার্লামেন্ট এবং পাবলিকলি কথা বলার সুযোগ নেই।
প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, মাসদার হোসেন মামলায় ১১৬ অনুচ্ছেদ এবং ১১৬ অনুচ্ছেদের এর ব্যাখ্যা দিয়ে মামলার রায় হয়েছে। এখন যদি আপনাদের কাছ থেকে ব্যখ্যা শুনতে হয় তাহলে দুঃখজনক।
পরে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা সংক্রান্ত আইনের কয়েকটি ধারা অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনানি দুই সপ্তাহের জন্য মুলতবি করেন আদালত। এ সময় পর্যন্ত স্থগিতাদেশের মেয়াদও বৃদ্ধি করা হয়েছে।