#

দীর্ঘ ২৮ বছরের প্রতীক্ষা শেষে আজ অনুষ্ঠিত হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ। এ নির্বাচনকে ঘিরে দেশের ছাত্রসমাজ ও রাজনীতি সচেতন মানুষের মধ্যে আগ্রহ দেখা দিয়েছে। নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার নিরাপত্তা বৃদ্ধিসহ ভোট গ্রহণের সব প্রস্তুতি শেষ করেছে প্রশাসন। হলে হলে ব্যালট পেপার ও ব্যালট বাক্সসহ প্রয়োজনীয় নির্বাচনী সরঞ্জাম গতকাল রবিবারেই পৌঁছে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ভোট গ্রহণ চলবে সকাল আটটা থেকে একটানা দুপুর ২টা পর্যন্ত।

এবারের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলোর জোট প্রগতিশীল ছাত্র ঐক্য, কোটা সংস্কার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ শিক্ষার্থী অধিকার পরিষদসহ অন্যান্য সংগঠন এবং স্বতন্ত্র জোট মিলে মোট ১৩টি প্যানেলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর বাইরে বিভিন্ন পদে স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও রয়েছেন। চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা অনুসারে ডাকসুর ২৫টি পদের বিপরীতে লড়বেন ২২৯ জন প্রার্থী। এর মধ্যে সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে ২১ জন, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ১৪ এবং সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন ১৩ প্রার্থী। এ ছাড়া স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক পদে ১১ জন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে ৯ জন, কমনরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক পদে ৯ জন, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক পদে ১১ জন, সাহিত্য সম্পাদক পদে ৮ জন, সংস্কৃতি সম্পাদক পদে ১২ জন, ক্রীড়া সম্পাদক পদে ১১ জন, ছাত্র পরিবহন সম্পাদক পদে ১০ জন ও সমাজসেবা সম্পাদক পদে ১৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এর বাইরে ১৩টি সদস্য পদের বিপরীতে লড়বেন ৮৬ প্রার্থী। এ ছাড়া ১৮টি হল সংসদে ১৩টি করে ২৩৪ পদের বিপরীতে প্রার্থী রয়েছেন ৫০৯ জন। প্রত্যেক ভোটার কেন্দ্রীয় সংসদে ২৫টি এবং হল সংসদে ১৩টি পদে একটি করে মোট ৩৮টি ভোট দিতে পারবেন। এ নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ৪৩ হাজার ২৫৬ জন।

১৮ হলের ৫১১ বুথে চলবে ভোট গ্রহণ

৪৩ হাজার ২৫৬ জন ভোটারের ভোট গ্রহণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ১৮টি হলে সর্বমোট ৫১১টি বুথ স্থাপন করেছে। মাত্র ছয় ঘন্টা সময়ে এত বিপুলসংখ্যক ভোটারের ভোট গ্রহণ কতটা সম্ভব তা নিয়ে কয়েকজন প্রার্থী সংশয় প্রকাশ করলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, শিক্ষার্থীরা যাতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ভোট দিতে পারেন সেজন্য হলগুলোতে পর্যাপ্ত বুথের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

হলের রিটার্নিং কর্মকর্তারা জানান, সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে ৩৫টি, শহীদুল্লাহ হলে ২০টি, ফজলুল হক মুসলিম হলে ৩৫টি, অমর একুশে হলে ২০টি, জগন্নাথ হলে ২৫টি, জসীম উদ্দীন হলে ২০টি, মাস্টারদা সুর্যসেন হলে ৩৫টি, মুহসীন হলে ৩০টি, রোকেয়া হলে ৫০টি, কবি সুফিয়া কামাল হলে ৪৫টি, শামসুন্নাহার হলে ৩৫টি, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলে ২০টি, কুয়েত-মৈত্রী হলে ১৯টি, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে ২২টি, স্যার এ এফ রহমান হলে ১৬টি, বঙ্গবন্ধু হলে ২৪টি, জিয়া হলে ২০টি ও বিজয় একাত্তর হলে ৪০টি পোলিং বুথ করা হয়েছে। তবে ভোট কেন্দ্রে কোনো প্রার্থীর পক্ষে পোলিং এজেন্ট থাকবে না বলেও জানানো হয়। প্রত্যেক বুথে হলের আবাসিক শিক্ষকদের নিয়ে পোলিং কর্মকর্তারা থাকবেন। এ বিষয়ে শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হুমাযুন কবির বলেন, কোনো হলে পোলিং এজেন্ট থাকবে না। হলের আবাসিক শিক্ষকদের নিয়ে পোলিং কর্মকর্তা থাকবেন। তারাই বুথে প্রবেশ করতে পারবেন। অন্য কেউ নয়।

চার দাবিতে ভিসির কাছে স্মারকলিপি

এদিকে গতকাল রোববার প্রগতিশীল জোট ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ভোট গ্রহণের সময় বাড়ানো, প্রার্থীদের পোলিং এজেন্ট দেওয়ার সুযোগ, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স এবং নির্বাচনের দিন বিভিন্ন সড়কে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস বাড়ানোর দাবিতে উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন। স্মারকলিপি দিতে গেলে উপাচার্যের কার্যালয়ের গেটে তাদের বাধা দেওয়া হলে প্রার্থীরা সেখানেই অবস্থান নেন। পরে প্রার্থীদের মধ্যে কয়েকজনকে ভিসির কার্যালয়ে ঢোকার অনুমতি দেওয়া হয়। এ সময় বাম জোটের সহ-সভাপতি (ভিপি) প্রার্থী লিটন নন্দী, কোটা আন্দোলনের নেতা, ভিপি প্রার্থী নুরুল হক নুরু, স্বতন্ত্র সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী এ আর এম আসিফুর রহমান, স্বতন্ত্র জোটের ভিপি প্রার্থী অরণী সেমন্তী খান ও ছাত্র ফেডারেশনের জিএস প্রার্থী উম্মে হাবিবা বেনজীর ভিসি কার্যালয়ে গিয়ে উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি দেন।

স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সক্ষমতার মধ্যেই কয়েকটি বিষয় নিশ্চিত করা হলে ১১ তারিখের নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করা সম্ভব। এর মধ্যে আছে, ৪ ঘণ্টা ভোট গ্রহণের সময় বাড়ানো, কেবল পোলিং বুথের ভেতর ছাড়া নির্বাচনী এলাকা ও ভোট কেন্দ্রের তথ্য সংগ্রহে সব ধরনের মিডিয়ার অবাধ সুযোগ তৈরি, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ব্যবহার ও পোলিং এজেন্ট নিয়োগের অনুমতি, নির্বাচনী পর্যবেক্ষক ও ভোটারদের নিরাপত্তা বিধানে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ, ভোট গ্রহণের দিন সকাল বেলা সব রুটে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসের সংখ্যা বাড়ানো।’

সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা সাদা দলের শিক্ষকদের

গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম অভিযোগ করেন, জাতীয় নির্বাচনের মতো ডাকসু নির্বাচনকেও প্রশ্নবিদ্ধ করার ষড়যন্ত্র করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না আশঙ্কা করে তিনি বলেন ডাকসু নির্বাচনে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সের ব্যবস্থা নেই। নির্বাচনে কারচুপি করার জন্যই প্রশাসন অস্বচ্ছ ব্যালট বাক্সের ব্যবহার করছে। তিনি বলেন, সর্বশেষ অনুষ্ঠিত ১৯৮৯-৯০ এবং ১৯৯০-৯১ এর নির্বাচনে ডাকসু নির্বাচনে হলের ভোট হলে গণনা করা হতো, আর কেন্দ্রীয় সংসদের ভোট কেন্দ্রীয়ভাবে গণনা করা হতো। বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনে একটি বুথ বসিয়ে সেখানে এ গণনা কাজ করা হতো। কিন্তু চলতি নির্বাচনে হলে, হলে ভোট গণনা করা হবে। এতে করে ভোট কারচুপির আশঙ্কা থেকে যায়।

লিখিত বক্তব্যে নির্বাচনী কমিটিগুলোতে ভিন্নমতের শিক্ষক নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ১৮ হল সংসদ নির্বাচনে হলের প্রশাসনে প্রশাসন সমর্থক শিক্ষক ছাড়া ভিন্নমতের কোনো একজন প্রভোস্ট ও হাউজ টিউটর নেই। ফলে নির্বাচন পরিচালনায় গঠিত নির্বাচন কমিশনে শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তির সুযোগ ছিল এবং আমাদের পক্ষ থেকে উপাচার্যের কাছে এ দাবি করা হয়েছিল। কিন্তু আমাদের দাবি উপেক্ষা করা হয়।

উত্তর দিন

Please enter your comment!
এখানে আপনার নাম লিখুন