অভ্যুত্থান চেষ্টার সময় গুলিতে মারা গেছেন সৌদি যুবরাজ?

লেখক:
প্রকাশ: ৭ years ago

সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে দীর্ঘদিন ধরে জনসমক্ষে দেখা না যাওয়ায় ইরানের বেশ কিছু গণমাধ্যম বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছে, গত মাসে এক অভ্যুত্থান চেষ্টার সময় দেশটির প্রভাবশালী এই যুবরাজ কি তাহলে মারা গেছেন!

ইরানের ইংরেজি ভাষার দৈনিক কায়হানের বরাত দিয়ে রুশ সংবাদ সংস্থা স্পুটনিক এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। কায়হান বলছে, আরবের কোনো একটি দেশের (দেশের নাম প্রকাশ করা হয়নি) জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তাদের কাছে এক প্রতিবেদন পাঠিয়েছে একটি গোয়েন্দা সংস্থা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রিয়াদের রাজ প্রাসাদে গত ২১ এপ্রিলের হামলায় সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের শরীরে দুটি বুলেট আঘাত হানে। এ ঘটনার পর থেকে তাকে জনসমক্ষে দেখা যায়নি, সম্ভবত তিনি মারা গেছেন।

এদিকে, ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেল প্রেস টিভি বলছে, ওইদিনের পর থেকে এখন পর্যন্ত সৌদি কর্তৃপক্ষ যুবরাজের কোনো ছবি অথবা ভিডিও প্রকাশ করেনি। এমনকি এপ্রিলের শেষের দিকে মার্কিন নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পে তার প্রথম সফরে রিয়াদে গেলেও যুবরাজকে সেসময় ক্যামেরার সামনে দেখা যায়নি।

ইরানি সংবাদ সংস্থা ফারস বলছে, বিন সালমান এমন একজন মানুষ যাকে প্রতিনিয়ত গণমাধ্যমে দেখা যায়। কিন্তু রিয়াদের রাজপ্রাসাদে গোলাগুলির পর ২৭ দিন ধরে গণমাধ্যমে অনুপস্থিতির ঘটনায় সৌদি যুবরাজ সুস্থ্য আছেন কিনা সেবিষয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

এর আগে, গত ২১ এপ্রিল বেশ কিছু সংবাদ সংস্থা জানায়, সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদের রাজপ্রাসাদে ব্যাপক গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। সম্ভাব্য অভ্যুত্থান চেষ্টা থেকে এ গোলাগুলির ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে সেসময় গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে।

saudi

ওইদিন রাজপ্রাসাদের কাছে একটি ড্রোন চলে আসায় নিরাপত্তারক্ষীরা সেটি লক্ষ্য করে গুলি চালায়। সৌদি কর্তৃপক্ষের দাবি বিনা অনুমতিতে ড্রোনটি রাজপ্রাসাদ চত্বরে উড়ছিল। স্থানীয় বেশ কিছু গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, গোলাগুলির ওই ঘটনার সময় রাজপ্রাসাদ থেকে বাদশাহ সালমানকে কাছের একটি সামরিক স্থাপনায় সরিয়ে নেয়া হয়।

অন্যদিকে, অভ্যুত্থানের গুঞ্জনের এক সপ্তাহ পরে সৌদি বাদশাহ সালমানের সঙ্গে যুবরাজকে কিদ্দিয়ার বিশাল বিনোদন উদ্যানের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেখা যায়। কিদ্দিয়ায় সৌদি সরকার দেশটির উচ্চাভিলাষী মাল্টি-বিলিয়ন ডলারের বিনোদন প্রকল্প তৈরি করছে। এ প্রকল্পে ছয়টি ফ্ল্যাগ থিম পার্ক, ওয়াটার পার্ক, মোটর স্পোর্টস, সাংস্কৃতিক ও অবকাশযাপন কেন্দ্র রয়েছে।

 

بدر العساكر B.Asaker

@Badermasaker

لقاءٌ وديٌّ يستمر بين الأشقاء..
كان في ضيافة فخامة الرئيس المصري عبدالفتاح السيسي قبل أيام.

শুক্রবার (১৮ মে, ২০১৮) যুবরাজের ব্যক্তিগত কার্যালয়ের পরিচালক বাদের আল-আসাকার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে মোহাম্মদ বিন সালমান, আবুধাবির ক্রাউন প্রিন্স শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান, বাহরাইনের বাদশাহ বিন ইশা ও মিসরের প্রেসিডেন্ট আব্দেল ফাত্তাহ আল-সিসির একটি গ্রুপ ছবি টুইট করেন।

তবে এই ছবি ঠিক কখন তোলা হয়েছে সেব্যাপারে আসাকার কোনো তথ্য না দিয়ে ছবির ক্যাপশনে বলেছেন, কয়েকদিন আগে মিসরের প্রেসিডেন্ট আব্দেল ফাত্তাহ আল-সিসির উদ্যোগে দুই ভাইয়ের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।

মধ্যপ্রাচ্যের দুই ক্ষমতাধর দেশ সৌদি আরব এবং ইরান এই অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে আধিপত্য বিস্তারের লড়াই করছে। ইয়েমেন এবং সিরিয়া সংঘাতে উভয় দেশ বিপরীত পক্ষকে সমর্থন দিয়ে আসছে। তবে ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা যখন সৌদি আরবে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু করে তখন থেকে রিয়াদ এবং তেহরানের সম্পর্ক আরো খারাপ আকার ধারণ করে। একই সঙ্গে ইয়েমেনের এ বিদ্রোহীগোষ্ঠীকে ইরান অর্থ এবং অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করছে বলে অভিযোগ আনে সৌদি।

২০১৬ সালের জানুয়ারিতে তেহরান এবং মাশদাদে সৌদি দূতাবাসে হামলার ঘটনার পর ইরানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে সৌদি আরব। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অভিযুক্ত ইরানের শিয়া মতাবলম্বী শীর্ষ নেতা শেখ নিমর আল নিমরসহ আরো ৪২ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে রিয়াদ।

Press TV

@PressTV

Saudi crown prince goes into hiding since last month’s attack on royal palace http://ptv.io/2a5p 

গত বছরের ডিসেম্বরে ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি দুই দেশের সম্পর্ক পুনরায় স্থাপনে দুটি শর্ত জুড়ে দেন। তিনি বলেন, ‘ইয়েমেনে অমানবিক বোমা হামলা ও ইসরায়েলের সঙ্গে ভ্রান্ত বন্ধুত্ব বাতিল করতে হবে রিয়াদকে।’

চলতি বছরের মার্চে মার্কিন প্রভাবশালী দৈনিক ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে দেয়া এক স্বাক্ষাৎকারে আগামী ১০-১৫ বছরের মধ্যে ইরানের সঙ্গে সৌদি আরবের যুদ্ধ আসন্ন বলে সতর্ক করে দেন সৌদি যুবরাজ। একই সঙ্গে সামরিক দ্বন্দ্ব এড়াতে ইরানের বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।