#

যোগাযোগ প্রযুক্তির সহজলভ্যতার ফলে আমেরিকা, ইউরোপের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি অর্জন করতে পারেন ঘরে বসেই। পেতে পারেন হার্ভার্ড, এমআইটি, স্ট্যানফোর্ড, অক্সফোর্ডসহ নামি বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদও! এ ছাড়া বিনামূল্যের কোর্সে অংশগ্রহণের সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে প্রায় সব নামিদামি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইনে। ফলে ইউরোপ আমেরিকায় না গিয়েও অনলাইন এখন তরুণদের কাছে বিদেশি ডিগ্রি অর্জনের বিকল্পপথ হয়ে উঠছে। বিশ্বের প্রায় ১৬৫টি দেশের ২০ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শতাধিক বিষয়ের ওপর বিনামূল্যে বিভিন্ন কোর্সে পড়ছে অনলাইনে। দেশের বিভিন্ন কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও এখন রুটিন করে অনলাইনে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো ইন্টারনেটের সহজলভ্যতায় এ হার বাংলাদেশেও প্রতিনিয়ত বাড়ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট সার্চ বিশ্বব্যাপী শিক্ষার্থীদের কাছে অতি জনপ্রিয় বিষয়ে পরিণত হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রোগ্রামের বিষয়ে সার্চ করেন অনলাইনে। এসব সার্চের তথ্যের ভিত্তিতে ভিন্নরকম তালিকা তৈরি করেছে সার্চ জায়ান্ট গুগল। সচরাচর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তৈরি সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা থেকে এটি আলাদা। অনলাইনে সবচেয়ে বেশি সার্চের ভিত্তিতে গুগল প্রকাশিত বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় নেই বিশ্বের অনেক নামি বিশ্ববিদ্যালয়।

গুগল সার্চের সেরা ২০ বিশ্ববিদ্যালয়

গুগল সার্চের ওপর ভিত্তি করে ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের অনলাইন প্রোগ্রামে অতি আগ্রহের ফলে এক নামে পরিচিত বেশকিছু বিশ্ববিদ্যালয় ঠাঁই পায়নি এ তালিকায়। গুগল প্রকাশিত শীর্ষ ২০ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় আছে ভারতের পাঁচ বিশ্ববিদ্যালয়। এই তালিকা থেকে খুব সহজেই বোঝা যায় যে, শিক্ষার্থীরা গতানুগতিক ক্যাম্পাস প্রোগ্রামের চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইন প্রোগ্রামের প্রতি বেশি ঝুঁকছেন। অন্তত সার্চের ফলাফল তাই বলছে। যুক্তরাষ্ট্রের আরিজোনার ইউনিভার্সিটি অব ফিনিক্স রয়েছে গুগল প্রকাশিত তালিকার শীর্ষে। বিশ্ববিদ্যালয়টির ই-ক্যাম্পাস প্রোগ্রাম অনেক জনপ্রিয়। আন্ডারগ্র্যাজুয়েট, গ্র্যাজুয়েট, মাস্টার্স ডিগ্রি প্রোগ্রাম ছাড়াও অনেক শর্ট কোর্স রয়েছে গত শতাব্দীতে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়টির। শুধু অনলাইন প্রোগ্রামে এগিয়ে থাকার কারণে শিক্ষার্থীদের সার্চ তালিকায় বিশ্ববিদ্যালয়টি পেছনে ফেলেছে হার্ভার্ড, স্ট্যানফোর্ড ও কলম্বিয়ার মতো বিশ্ববিদ্যালয়কে। অনলাইন টাস্ক ম্যানেজমেন্ট বিশ্ববিদ্যালয় টেকশহর, এরপর রয়েছে আরেক নামি মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয় ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি। অনলাইন প্রোগ্রামের অগ্রপথিক বলা হয় বিশ্ববিদ্যালয়টিকে। এটির প্রোগ্রাম সবসময়ই আপডেট থাকে বলে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ এ বিশ্ববিদ্যালয়কে ঘিরে।

ইউরোপের ঐতিহ্যবাহী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পেছনে ফেলে শিক্ষার্থীদের সার্চের তৃতীয় অবস্থানে আছে দ্য ওপেন ইউনিভার্সিটি। যুক্তরাজ্যের এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইন বা ই-ক্যাম্পাস ইউরোপের দেশগুলোর অনলাইন পড়াশোনায় নেতৃত্ব দিচ্ছে। ছাত্রছাত্রীদের আগ্রহের কারণে উন্নয়ন ঘটানো হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইন প্রোগ্রামে। যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সার্চ করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে এশীয় ও পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলো থেকে এগিয়ে।

এগিয়েছে ভারত, তালিকায় উঠে আসছি আমরাও

ম্যাসিভ ওপেন অনলাইন কোর্স প্রদান করে এমন অনেক প্রতিষ্ঠান ইউকে ইউনিভার্সিটি থেকে সার্চে এগিয়ে আছে। এর মধ্যে রয়েছে ইডিএক্স ও ফিউচারলার্ন। অবাক করা বিষয় হচ্ছে, চতুর্থ অবস্থানটি একটি ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের। কেরালার কালিকাট বিশ্ববিদ্যালয়। ভারতীয় শিক্ষার্থীদের অনলাইন ডিগ্রির আগ্রহ বা টেকনোলজির ব্যবহারে তাদের এগিয়ে যাওয়ার এটি একটি প্রমাণ। গুগলের তালিকার শীর্ষ ২০-এ রয়েছে আরও একটি ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। চেন্নাইয়ের আন্না বিশ্ববিদ্যালয়। যার অবস্থান ৬ নম্বরে। মাঝের অবস্থানটি ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার। অনলাইন-শপিং-শিক্ষা-ভার্সিটি-টেকশহর ভারতীয় আরও তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান হচ্ছে- ১১ নম্বরে ইউনিভার্সিটি অব মুম্বাই, ইউনিভার্সিটি অব রাজস্থান ১৮ ও আন্নামালাই ইউনিভার্সিটি রয়েছে ২০ নম্বরে। তবে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরাও এখন পিছিয়ে নেই। শিগগিরই হয়তো বাংলাদেশি কোনো বিশ্ববিদ্যালয় এই তালিকায় স্থান করে নেবে; আর এতে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না!

বিশ্নেষকদের টেবিল থেকে

শিক্ষার্থীদের কাছে যেতে এবং নিজেদের গুরুত্ব বোঝাতে ইন্টারনেট এখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। অনলাইনে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বিবেচনায় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিভিন্ন কোর্স ক্রমবর্ধমান হারে বাড়াচ্ছে। ইন্টারনেট আগ্রহের কারণে ঐতিহ্যবাহী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাচ্ছে ই-ক্যাম্পাসভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্নেষকদের মতে, এ কারণে প্রচলিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে এখন নতুন করে ভাবতে হবে। পরিকল্পনা করতে হবে, তারা কি পরিবর্তনকে স্বাগত জানিয়ে এগিয়ে যাবে, না খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা না করে ভবিষ্যতের ঝুঁকি নিয়ে এগিয়ে যাবে?

যদিও ইন্টারনেট বিশ্ববিদ্যালয়কে শিক্ষার্থীদের কাছে নিয়ে যাওয়ার প্রাথমিক ধাপ। অনলাইন ডিসিশন নিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এ ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট এখন শিক্ষার্থীদের সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করছে।

আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান

উপরের প্রতিষ্ঠানগুলো ছাড়াও আরও বেশকিছু আলোচিত প্রতিষ্ঠানে ডিগ্রি নিতে পারেন অনলাইনে। চলুন, সেসবের খোঁজ জানা যাক-

এডেক্স : যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং এমআইটি একসঙ্গে মিলে ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠা করে এডেক্স। এটি তাদের অনলাইন পড়াশোনার জগৎ। ৬০ মিলিয়ন ডলার খরচ করে বানানো হয়েছে এই ওয়েবসাইটটি। শুরুতে এমআইটির শিক্ষকরা এমআইটিএক্স প্রকল্পের মাধ্যমে অনলাইন কোর্স চালু করে। প্রথম ছয় মাসেই বিশ্বের ১৬০টি দেশের প্রায় ১৫ লাখ শিক্ষার্থী নিবন্ধন করে এই অনলাইন কোর্সে। চাইলে আপনিও এই পথে নামতে পারেন। www.edx.org-এই লিংকই বাতলে দেবে আপনাকে ডিগ্রি অর্জনের হাল-হকিকত। হার্ভার্ড-এমআইটি ছাড়াও বার্কলি ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস সিস্টেম, ওয়েলেসলি বিশ্ববিদ্যালয়, জর্জ টাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত বিভিন্ন কোর্সে বিনামূল্যে তিন সপ্তাহের কোর্স থেকে শুরু করে কয়েক মাসের কোর্সে অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন। কোর্স শেষে এডেক্স নির্ধারিত পরীক্ষাকেন্দ্রে পরীক্ষা দিয়ে তাতে উত্তীর্ণ হয়ে পাবেন সার্টিফিকেটও।

কোর্সেরা : লাখ লাখ শিক্ষার্থীর অনলাইন পড়াশোনার অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে কোর্সেরা। বিশ্বের প্রায় ১৭০টি দেশের শিক্ষার্থী একটি হলেও কোর্স করছেন এই প্রতিষ্ঠান থেকে। িি.িপড়ঁৎংবৎধ.ড়ৎম-এই সাইট থেকে কম্পিউটার সায়েন্স, চিকিৎসাবিজ্ঞান, গণিত, পরিসংখ্যান, অর্থনীতিসহ ২০টি বিষয়ের ওপর ১০০টি অনলাইন কোর্সে পড়াশোনার সুযোগ পাচ্ছেন।

ওপেন কোর্সওয়্যার কনসোর্টিয়াম : বিনা পয়সায় বিভিন্ন বিষয়ের ওপর কোর্স প্রদান করে এমন বিশ্ববিদ্যালয় নিয়েই প্রতিষ্ঠিত হয় ওপেন কোর্সওয়্যার কনসোর্টিয়াম। ৩০টি ভাষায় প্রায় ৭০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এর অন্তর্ভুক্ত। www.coursera.org-এই কনসোর্টিয়ামের মাধ্যমে আপনিও নিতে পারেন বিনা পয়সায় ডিগ্রি।

আরও কিছু প্রতিষ্ঠান

এ ছাড়াও আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি, পাঠদান ও পরীক্ষা পদ্ধতিসহ বিস্তারিত জানতে পারবেন এসব সাইট থেকে-

ইউনিভার্সিটি অব ফিনিক্স :
www.phoenix.edu

আমেরিকান ইন্টারকন্টিনেন্টাল ইউনিভার্সিটি :
www.aiuonline.edu|

ডেভরি ইউনিভার্সিটি :
www.devry.edu|

ইউনিভার্সিটি অব ব্রিমেন :
elearning.uni-bremen.de|

ওয়েস্টার্ন গভর্নরস ইউনিভার্সিটি :
www.wgu.edu|

ইউনিভার্সিটি অব আলাস্কা ফেয়ার ব্যাংকস :
http://elearning.uaf.edu|

লিবার্টি ইউনিভার্সিটি অনলাইন :
www.luonline.com|

এসব প্রতিষ্ঠান থেকে ঘরে বসেই নিতে পারবেন বিদেশি ডিগ্রি। দেশের যেই প্রান্তেই থাকুন, অনায়াসে নিতে পারবেন উচ্চশিক্ষার সনদ।

উত্তর দিন

Please enter your comment!
এখানে আপনার নাম লিখুন